অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার, নিয়ন্ত্রণ কার হাতে
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। প্রতি সপ্তাহেই বদলে যাচ্ছে পণ্যের মূল্য তালিকা। বিগত সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল কিন্তু যে লাউ সেই কদু। বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। একটার পর একটা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু কেবল ডিমের দাম কিছুটা কমলেও বাকি ৫ পণ্যে কোনো প্রভাব নেই বাজারে।
কমার বদলে উল্টো বেড়ে গেছে এসব পণ্যের দাম। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ও বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কিন্তু কোনো প্রভাব পড়ছে না। নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে ৬টি পণ্যের আমদানি শুল্কে ছাড়ও দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও শুল্ক হ্রাস করা এসব পণ্যের মধ্যে কেবল কমেছে ডিমের দাম। বাজারে বাকি পাঁচ পণ্যের দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী। কোনো পণ্যের শুল্ক বাড়ালে দামও হু হু করে বেড়ে যায়। কিন্তু শুল্ককর কমালেও বাজারে তার প্রভাব নেই। ভোক্তাকে আগের চেয়ে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। চাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম বাড়লে বেশি সমস্যায় পড়েন গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ। এমন চিত্র থেকে প্রমাণ মেলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সব উদ্যোগ।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পার হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দুর্বল অর্থনীতির দেশে এটা এক বড় সমস্যা। ফলে নিম্ন আয়সম্পন্ন মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্তরাও তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রায় দুই বছর ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেসামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আমদানিনির্ভরতা, বাজারে সিন্ডিকেট, মজুতদারির কারণে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। জনসাধারণের স্বস্তির জায়গা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত দুই মাসে ভোগ্যপণ্যের গড় দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই’ বাজারে অস্থিরতা। প্রতিশ্রুতির দিনের তালিকায় দিন যোগ হয় কিন্তু পণ্যের দাম কমে না। আরও বাড়তি টাকা গুনতে হয় ভোক্তাদের। কিন্তু বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে দরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল, ক্রমেই তা হতাশায় রূপ নিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি যদি সত্য হয় তাহলে ব্যর্থতা কাদের? উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বহুদিন ধরেই অস্বস্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বস্তুত নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত; সমস্যার সমাধানে কী করণীয় তাও বহুল আলোচিত। আলোচিত সমস্যার সমাধানে জোরালো বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা দরকার। টাস্কফোর্সের উদ্যোগে প্রতিদিন বাজার মনিটরিংসহ আরও বেশকিছু কার্যক্রম চলমান রাখার কথা ছিল, তাদের দায়িত্ব পালনও করছেন। জনগণের প্রত্যাশাও ছিল- এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে। কিন্তু বাজার কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না- এমন প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না-বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে।
আমাদের প্রত্যাশা বিগত সরকার যা ১৬ বছরে পারেননি সেই কঠিন কাজটি এ যুগের তরুণদের দ্বারা অসম্ভব নয়। জনগণের কাছে এখন তারা আস্থার প্রতীক। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। দাম নিয়ন্ত্রণে পণ্য আমদানি একমাত্র ও সবচেয়ে ভালো সমাধান নয়। আমদানি শুল্ক হ্রাস ও আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে তদারকি আরও বাড়াতে হবে। এছাড়াও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।