আর্থিক খাতে এত বড় ক্ষত কল্পনাতীত
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আর্থিক খাতে এত বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেটা বাইরে থেকে কল্পনাও করা যাবে না। এত অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি। তবে আশাহত হওয়া যাবে না। বাংলাদেশের যে কর্মদক্ষতা আছে তা অতুলনীয়। ব্যাংক খাত, শেয়ারবাজার, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। আপাতত আমরা স্বল্পমেয়াদি কিছু সংস্কারে জোর দিয়েছি। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে হবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারকে।
শনিবার আর্থিক খাতে সংস্কার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান রাত ৯টা পর্যন্ত একটা অনুমোদন দেওয়ার জন্য বসে থাকে সেই প্রতিষ্ঠান কেমন চলতে পারে ভাবুন। এখন রিজার্ভ থেকে এক টাকাও বিক্রি না করে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের বকেয়া পরিশোধ করছে। অথচ আগের গভর্নর ৪২ বিলিয়ন থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে দিলেন। এভাবে রিজার্ভ নিঃশেষ করে এখন মহা আনন্দে কোথায় আছেন জানি না। আমি প্রায়ই বলি আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতা না। এই দায়িত্বের প্রথম দেশটা যেভাবে চলছিল সেটা ঠিক করা। এটা মেরামত করতে সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা অনেকেই বলেছেন। আমি তিন সরকারের সময়ে গভর্নরের দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়েছি। তখন সবাই ফেরেশতা ছিল না। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। এখন তা আড়াই লাখ কোটি টাকা। এই খেলাপি কেন, কাদের জন্য বেড়েছে সেটা সবার জানা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের উন্নয়ন কৌশলটা ভুল ছিল। শুধু প্রবৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে রিজার্ভ বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কম রয়েছে। তবে এসব চুঁইয়ে পড়ছে কিনা তা দেখা হয়নি। এটা দেখার দায়িত্ব ছিলো নীতি প্রণেতাদের। প্রবৃদ্ধিটা সবাইকে নিয়ে হয়েছে কিনা দেখা হয়নি। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নেই। তারপরও বলবো, যেটা আছে ভয়ের কিছু নেই।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা অস্থির হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছু ক্রটি আছে। বগুড়া থেকে কারওয়ানবাজার আসতে ১৭ জায়গায় টাকা দিতে হয়। কিছু জায়গায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী দরকার আছে। তবে কেউ-কেউ আছে কিছু না করেই কেবল ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি করছে। যে কারণে আমি চেয়েছিলাম কিছু ডিলার পরিবর্তন করতে। তবে পরিবর্তন করলে আরেক গ্রুপ এসে নাকি চাঁদাবাজি শুরু করবে। এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন।
সালেহউদ্দিন বলেন, ব্যাংক খাত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, শেয়ারবাজারে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। তবে শেয়ারের দর কেন কমল এ নিয়ে অনেকেই রাস্তায় নেমেছেন। তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চান, আমাকে নিয়েও বলছেন। তবে সংস্কার করতে গেলে কিছু ব্যথা সইতে হবে। আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আবার চেক অনার করার জন্য এক মাসে ১৮ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অনেক ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। চিন্তা করেন ব্যাংকগুলোকে কীভাবে নিশ্চিন্ন করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছি এটা কম কিছু না। কেউ যদি বলে আমার সময়ের কারণে এটা হয়েছে, সেটা ঠিক না। বাহাদুরির প্রাপ্য এদেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষ। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ থেকে আজ যে ১৭ কোটি মানুষের খাবার উৎপাদন করছে এটা করছে কৃষকরা। আমাদের শিল্প যদি দেখি সেখানে কারা শ্রম দিচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার নিট আয় করছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।