সারাদেশ

থমকে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ

মোহাম্মদ বিপুল হোসেন, জামালপুর (সদর) প্রতিনিধি।

ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মাণাধীন নান্দিনা সেতুর নির্মাণ কাজ। তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গেল দুই বছরে সেতুটির কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ।

অভিযোগ উঠেছে যে, মূল ঠিকাদার জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ফারুক আহাম্মদ চৌধুরী ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। তাছাড়া সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে সেতুটির কাজ আর হচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পূর্ব জামালপুরের লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সেতুটির কাজ বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। তবে এলজিইডি জানিয়েছে যে, ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।

জামালপুরের লক্ষীরচর, তুলশীরচর ইউনিয়ন ও শেরপুর জেলার চরাঞ্চলের সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নান্দিনা ফেরিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু নির্মাণের টেন্ডার হয় ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর। জামালপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় নান্দিনা-লক্ষীরচর সড়কে এই সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

শুরুর দিকে নির্মাণ কাজের গতি থাকলেও গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর সেতু নির্মাণ কাজ থমকে যায়। সম্প্রতি সেতুর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারের নির্মাণ সামগ্রী দেখভালকারী দুই-চার জন শ্রমিক ছাড়া সেতুটির সাইটে কেউ নেই। অথচ জেলা সদরের পূর্বাঞ্চল ও জামালপুর-শেরপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু এটি।

সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বদলে যাবে জামালপুর-শেরপুর জেলার চর অঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র। জামালপুরের লক্ষীরচর, তুলশীরচর ইউনিয়ন ও শেরপুর জেলার চরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের সড়ক যোগাযোগে স্থাপিত হবে নতুন দিগন্ত।

সেতুটির কাজ ২০২৫ সালের অক্টোবরে শেষ হবার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৪০ ভাগ। ঠিকাদার পলাতক থাকায় ও সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির অর্থ বরাদ্দ না থাকায়  মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে সেতুটির নির্মাণ কাজ। ফলে খেয়া নৌকা যোগেই দিন-রাত ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। ভূমি মালিকরা বলছেন, সরকার তাদের জমির মূল্য না দেওয়ায় তারা স্থাপনা সরাতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

আব্দুল হামিদ নামে একজন জানান, তাদের স্বপ্নের সেতু নিয়ে ছেলেখেলা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে কাজের গতি ভালো থাকলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যাতায়াতের ভোগান্তি আগের মতই রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মাঝে কাজ শেষ করা না হলে আন্দোলন শুরু করবেন তারা।

রেনুকা বেগম জানান, নদী পারাপারে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। সময়মত কোন কাজই করা যায় না। অনেক সময় ঘাটে নৌকা পেতেও দেরি হয়। বিশেষ করে এই অঞ্চলের রোগীদের ভোগান্তির কোন সীমা নেই। নদীর এপারে কোন ভালো হাসপাতাল নেই। তাই নদী পারাপার ছাড়া তাদের কোন উপায়ও নেই। একটি সেতুর অভাবে অনেক রোগীকে তাই বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হয়।

কৃষক খাইরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষিকাজ। অনেক পরিশ্রম করে ফসল ফলালেও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসলের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই কম দামে ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে।

জামালপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল ত্রিপুরা বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কাটাতে কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং