পাবনায় কৃত্রিম সংকটে সারের দাম বৃদ্ধি, বিপাকে কৃষকরা
সাব্বির আহমেদ(পাবনা জেলা প্রতিনিধি)
পাবনায় কৃষক পর্যায়ে অতিরিক্ত হারে বেড়েছে সারের দাম। ফলে প্রতি বস্তা সার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে আবাদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষকরা। সরবরাহ ঘাটতিতে দাম বেড়েছে বলে ডিলাররা দাবি করলেও কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ কৃষকদের।
বিক্রেতা ও কৃষকরা জানান, এমওপি (পটাশ) ও ইউরিয়া সারের দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহে পাবনায় অস্বাভাবিক হারে অন্যান্য সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৪০০ টাকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বাংলা ড্যাপ সারের দাম বেড়ে ২২০০-২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ১০৫০ টাকার বিএডিসি ড্যাপ ১৩০০, ১২৫০ টাকার টিএসপি (মরক্কো) ১৬০০ ও ১৭০০ টাকার বাংলা পতেঙ্গা ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা কাজ করছে।
পাবনায় ব্যাপক হারে পিয়াজ ও সবজি চাষ হয়। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে পাবনার সুজানগর, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও বেড়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় মুড়িকাটা পিয়াজের আবাদ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে চারা বা হালি পিয়াজের আবাদ। একই সঙ্গে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াসহ পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে।
এদিক থেকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পাবনায় এ সময়টাতে সার ও কীটনাশকের চাহিদা কয়েক গুণ বেশি। কৃষকদের দাবি, আবাদ মৌসুমে ব্যাপক চাহিদার বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন ডিলারসহ সার ব্যবসায়ীরা। গুদামে পর্যাপ্ত সার রেখে সংকটের মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন ডিলাররা। এমনিতেই পিয়াজ, রসুন ও সবজির বীজের দাম বেশি, আবার বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে কারসাজি করে সারের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে উঠেছে।
সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়ার কৃষক হাসান আলী বলেন, পিয়াজ ও রসুনসহ সকল প্রকার বীজের দাম খুব বাড়তি। এরমধ্যে সারের দাম বস্তায় কয়েকশ টাকা করে বেড়েছে। এর ফলে এক একর জমি আবাদ করতে খরচ বাড়বে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। সবশেষ খরচ উঠবে কি না, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
বেড়ার পুন্ড্রুরিয়া গ্রামের কৃষক সাইদ আলী বলেন, আমাদের নগরবাড়ি বন্দরেই তো সার নামে। প্রতিনিয়তই ব্যাপক সার আসতেছে। অথচ কিনতে গেলে বলে সরবরাহ কম, দাম বেশি। গত বছরের তুলনায় বিশেষত কয়েক সপ্তাহে সারের দাম যে হারে বেড়েছে, তা একদম অস্বাভাবিক। আবার বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে পিয়াজ ও সবিজ ১/২ চালান মার খেয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের কি ভাগ্যে কি আছে বলা মুশকিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খুচরা সার বিক্রেতা জানান, গত দুই মাস আগে থেকে ইঙ্গিত হিসেবে সারের দাম টুকটাক বাড়ানো হচ্ছিলো। মূলত তখন থেকেই গোডাউনে সার মজুত শুরু হয়েছে। এখন সংকট দেখিয়ে আমাদের থেকেও দাম বেশি নিচ্ছেন ডিলাররা। এমনিতে বলছেন সার নেই, বাড়তি দাম দিলে ঠিকই চাহিদামতোই সার মিলছে। এসব ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো মেমো দেয়া হচ্ছে না।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলাররা বলছেন, সরকারি বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা ব্যাপক বেশি। এ কারণে বাইরে থেকে সার আনতে হচ্ছে। ফলে দাম বেশি পড়ছে।
এ ব্যাপারে বেড়া সারের ডিলার হাজী নুরুল ইসলামের ম্যানেজার হাসান আলী জানান, চাহিদা মেটাতে দিনাজপুর ও ঠাঁকুরগাওসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সার কিনতে হচ্ছে। কয়েক হাত বদল হয়ে কৃষকের হাতে সার যেতে দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে। বরাদ্দ বেশি পেলে সারের দাম স্বাভাবিক হবে।
এ ব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, জেলায় সারের সংকট নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করলে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।