রাবিপ্রবি সংস্কারে কেমন উপাচার্য চায় শিক্ষার্থীরা
রাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)। একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ১০ বছরে দুইজন শিক্ষাবিদকে উপাচার্য হিসেবে পেয়েছে। ১ম উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত অধ্যাপক ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার।
গত ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ দাবি করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে গত ১৮ আগস্ট রাতে তিনি পদত্যাগ করেন।
উপচার্য পদত্যাগের পর নানা সংকট তৈরি হওয়ায় নতুন উপাচার্য যোগদান না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড.নিখিল চাকমাকে জরুরী অবস্থায় আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব দেওয়া হয়।
উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি শহরের বনরুপায় ‘রাঙ্গামাটি ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
রাবিপ্রবি পরিবারে এই মুহুর্তে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন আগামীতে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার। অভিভাবক হিসেবে কেমন উপাচার্য চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?
শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক- সঞ্চিতা চক্রবর্তী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন অর্ণব বলেন, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে আমি একজন অসাম্প্রদায়িক ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য চাই৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংকট দ্রুততার সাথে নিরসন করবেন । যিনি অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে একাডেমিক মান উন্নয়ন, গবেষণা প্রসার, এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। আর পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতা, নৈতিকতা এবং নিরপেক্ষতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করবেন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আয়নুল ইসলাম বলেন, মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তা-চেতনা চর্চার লালনক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে একটি জাতির মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানোর সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা, উদ্ভাবন এবং নৈতিকতার বিকাশ ঘটে। আর এতে নেতৃত্ব দেন একজন উপাচার্য । প্রসঙ্গ যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় রাবিপ্রবির উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তখন অবশ্যই উপাচার্য হতে হবে ব্যতিক্রমী।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করে কাজ শুরু করা,আন্তর্জাতিক মানোন্নয়নে কাজ করা,শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক এবং মানসিক সাপোর্ট সিস্টেম জোরদার করার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নে সাহায্য করা এবং রাবিপ্রবিকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে আমরা শিক্ষার্থীরা একজন দক্ষ উপাচার্য চাই।”
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী এম, আকতারুজ্জামান বলেন,”গত ৬ জানুয়ারি (সোমবার) উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ভিসি নিয়োগের জন্য সরকারকে আজ বুধবার(৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ভিসি হিসেবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি একজন যোগ্য ব্যক্তি চাই, যিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ নিরসনে কাজ করবেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সবকিছু সুষ্ঠ ভাবে করবেন। শিক্ষার্থীরা ভিসি নিয়োগে কোনো নিয়ম বেঁধে না দিলেও আমাদের ভিসি যেন অবশ্যই যোগ্য, শিক্ষার্থীবান্ধব ও অসাম্প্রদায়িক কেউ হন এটাই শিক্ষার্থীদের চাওয়া।”
ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী স্বাধীন ত্রিপুরা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়টি যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সে অনুযায়ী উপাচার্য হিসেবে বিজ্ঞানবিষয়ক কোনো যোগ্য শিক্ষাবিদ আমাদের প্রয়োজন। যিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার মান ও বিভিন্ন গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা ও সুযোগ প্রদান করবেন। সেই সাথে পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করবেন।”