ময়মনসিংহ অঞ্চলের জলাভূমি ও জনজীবন বই‘র প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট: আজ বারসিক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টারের হলরুমে নদী-হাওর-বিল-খাল কেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থার উপর লিখিত “ময়মনসিংহ অঞ্চলের জলাভূমি ও জনজীবন” বই‘র প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।বইটি লিখেছেন: লেখক গবেষক মো. অহিদুর রহমান,আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বারসিক নেত্রকোনা অঞ্চল। ১৭৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে “বারসিক”। প্রচ্ছদ একেঁছেন: শাহেদা আজবেলা পূর্ণা, আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক গবেষক প্রফেসর ননী গোপাল সরকার, আরো উপস্থিত ছিলেন লেখক গবেষক ও বারসিকের শিক্ষা,সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য বিভাগের পরিচালক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ গাছ বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিবেশ কর্মী আমিরুল রাজিব,গায়ক কোয়াশা মূর্খ্য,সাংবাদিক অমিত কান্তি দেব,চলচ্চিত্র নির্মাতা হেমন্ত সাদিক, মৌমিতা জান্নাত, প্রযত্নের একবাল হোসেন জুপিটার, নারায়ণগঞ্জের রুপগাঁও এর জান্নাতুল সিগ্ধা, দুনিয়ারি‘র আহাদুল মিরাজসহ বাংলাদেশের সামাজিক ও পরিবেশকর্মীগণ।
লেখক নেত্রকোনা অঞ্চলের নদী, হাওর, খাল, বিল নির্ভর মানুষের জীবন, পরিবেশ, কৃষি,সেচ, সংস্কৃতি, বিনোদনকে বর্ণনা করেছেন বইয়ের পাতায় পাতায় যা আামাদের জীবনসংস্কৃতিকেই তুলে ধরেছেন। যা আমাদের কাছে সম্পদ। জলাভূমি কেন্দ্রিক তথ্যের সন্ধ্যা করতে হলে বইটি অনেক সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
প্রধান অতিথি বলেন,“নেত্রকোনা জেলার জলাভূমি ও জীবন বইটি আমাদের জন্য একটি সম্পদ,হাওর,নদী,খাল,বিল পুকুরসহ সকল জলাধার আমাদের জীবন ও পরিবেশকে যেভাবে আগলে রেখেছিল,সমৃদ্ধ করে তার ঋণ পরিশোধ করতে পারবোনা। লেখক তাঁর বইয়ে এই তথ্যে লিপিবদ্ধ করে আমাদেরকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন” হাওর-নদী-নালা-বিল-জল-জলাশয়, পাহাড় বনবাদার নলখাগরায় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের লীলাভূমি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল ভূ-প্রকৃতির কোথাও হাওরের সুবিশাল জলাভূমি, এখানে আছে শত শত পুকুর, রয়েছে নদী খাল বিল পুকুর কিন্তু দিনদিন কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ, দখল হয়ে যাচ্ছে জলমহাল, শুকিয়ে যাচ্ছে নদী, নালা, খাল,বিল, মাছের অভয়াশ্রম, প্রজনন কেন্দ্র, বিলুপ্ত বিপন্ন মাছের প্রজাতি, হারিয়ে যাচ্ছে পেশা, জীবনে নেমে আসছে দারিদ্রতা। নদী, খালবিল, হাওর, জলাভুমি বিলুুপ্তির ফলে কমছে প্রাকৃতিক মাছের বৈচিত্র্য।পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললগঠিত সমতল ভূমি ও হাওর অঞ্চলের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবন জীবিকা, সম্পদ বিনিময় ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে টিকিয়ে রেখেছিল এ অঞ্চলের জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২৭১টি নদ-নদী, ৪৩৯টি খাল, ১২৩৯০০টি পুকুর, ২৮১ টি হাওর, ৮২৪টি বিল।
নদী-নালা- খাল-বিল-জলজলাশয় কেন্দ্রিক মানুষের জীবন, পেশা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আনন্দ বিনোদন ও কৃষির উপর জলাভুমির অবদান বিছিন্ন করা যায় না। দিন দিন নেত্রকোনার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদী, হাওর, বিল, জলাশয়। ফলে মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। প্রকৃতিনির্ভর মানুষের জীবন হয়ে পড়ছে বাজারনির্ভর। কমছে প্রাকৃতিক সম্পদে অভিগম্যতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও বিনিময়, বাড়ছে সম্পর্কহীনতা। জলাভূমিকেন্দ্রিক কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা, শিক্ষা সংস্কৃতির মজবুত পাটাতন। ২৭১ টি নদীর পানি কৃষিকে করেছে সমৃদ্ধ, নদী ও হাওরের পানির সেচের মাধ্যমে কৃষকের কৃষি চলতো, ঘরে উঠাতো মাঠের ফসল। নদীর তরল মহাসড়কে চলতো পালতোলা নৌকা, প্রবাহমান এসব নদী এখন বিলুপ্ত, ভরাট, পানি শূন্যতা কৃষিকে করেছে বিপর্যস্ত। এখন আর নদীতে পানি নেই। বোরো আবাদের জন্য মানুষেরা হন্যে হয়ে ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সাথে সাথে বাড়ছে উৎপাদন খরচও। জলকেন্দ্রিক এই জীবন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। এগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাই জলাভূমির গুরুত্বকে তুলেধরার জন্য প্রকাশের উদ্যোগ ‘ময়মনসিংহ অঞ্চলের জলাভূমি ও জনজীবন’ গ্রন্থটি।