সারাদেশ

সিরাজগঞ্জে হারাতে বসেছে শীতল পাটি

ওয়াসিম সেখ,কন্ট্রিবিউটর, সিরাজগঞ্জ.
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চুনিয়া হাটি গ্রামের শীতল পাটির চাহিদা এক সময় দেশব্যাপী সমাদৃত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পে এখন দুর্দিন চলছে।
এক সময় লোকশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পাটি শিল্প। বেত কেটে তা সিদ্ধ করে শুকিয়ে বুনানো হয় এই পাটি। গরমের দিনে এই পাটি ব্যবহারে স্বস্তির নিশ্বাস বা দেহমন ঠান্ডা হয় বলেই একে শীতল পাটি বলা হয়।
সরেজমিনে  সদর উপজেলার ৯নং কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের দুনিয়া হাটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পুরুষরা জমি থেকে পাটি বেত কেটে আনছেন। পরে সেগুলো বিশেষ দা দিয়ে এক ধরনের বেতী সুতা বানিয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সুতাগুলো রোদে শুকানোর পর তাতে নানা বাহারী রং দেওয়ার পর আবার রোদে শুকানো হচ্ছে। বেতী সুতা রোদে শুকানোর পর নারী শিল্পীরা নিপূণ হাতে তৈরি করছে শীতল পাটি।
জানা যায়, ৮০-৯০ দশকে এ সব শীতল পাটি সাধারন মানুষের ঘরে ঘরে ব্যবহার হত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের জীবন মানের পরিবর্তনের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শীতল পাটি শিল্প। এ পাটির পরিবর্তে এখন প্লাস্টিক পাটি, চট-কার্পেট, মোটা পলিথিন সহ বিভিন্ন উপকরণ স্থান দখল করে নিয়েছে।
শীতল পাটির বুনন ও চাহিদা কমলেও দুনিয়া হাটি গ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা শত কষ্টেও তাদের পূর্বপুরুষদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এ গ্রামের ৬০ পরিবারের প্রায় ১৬০ নারী-পুরুষ তাদের জাত পেশা হওয়ায় এখনো টিকিয়ে রেখেছেন এ শিল্প। বর্তমানে প্রতিটি শীতল পাটি প্রকারভেদে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চুনিয়া হাটি গ্রামের পাটি তৈরীর শিল্পী শ্রী আনন্দ চন্দ্র নন্দী জানান, এক সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে শীতল পাটি বাধ্যতামূলক কিনতো। বিয়ে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে শীতল পাটি উপহার দিতো। এখন আর সেদিন নেই। বর্তমানে শীতল পাটির কদর অনেকটা কমে গেছে। শীতল পাটির দাম কিছুটা বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। পাটি ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত পাই। একটি পাটি বুনতে তিন থেকে চারদিন সময় লাগে। একটা পাটি বুনতে যে পরিশ্রম আর সময় লাগে সে হিসেবে আমাদের মজুরি অনেক কম।
একই গ্রামের শীতল পাটি ব্যবসায়ী ও শিল্পী  নন্দলাল দে জানান, পূর্ব পুরুষেরা এ পেশাই করত। তাই ছোটবেলা থেকে এ পেশায় জড়িত। শীতল পাটি আগের মতো ব্যবহার না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও অনেকাংশে কমে গেছে। তাই এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প পেশায় চলে গেছে।
তিনি আরও জানান, শীতল পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল পাটি বেতের দাম বাজারে অন্যান্য ফসলের তুলনায় দাম কম হওয়ায় অনেকে পাটি বেতের ক্ষেত ভেঙে অন্য ফসল আবাদ করছে। এতে বেতের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে আধুনিকমানের শীতল পাটি তৈরীর প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, আমি এই প্রথম জানলাম এই গ্রামের কথা এখানে শীতল পাটি তৈরি করা হয়, উনাদের প্রতিনিধি দিকে আমার অফিসে আসতে বলেন সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। আগামীতে তাদের উন্নমানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন। কীভাবে শীতল পাটির বাজারজাত বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলা হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং