ইবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের ১৫ দফা দাবি

মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি:
ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ১৫ দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (১৯ জুলাই) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি সমূহ হলো- ১. তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে দুই থেকে আড়াই মাস সময় ক্ষেপন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রিপোর্ট প্রকাশের সময়সীমা কমিয়ে এনে ২৪ ঘণ্টার ভেতর প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে এবং আগামী ৬ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। ২. হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে ২ জন করে শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে এবং এর ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজিদের পরিবারকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৪. সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে CCTV ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী ৬ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. নতুন হলের নাম “সাজিদ আব্দুল্লাহ”র নামে নামকরণ করতে হবে। ৬. তদন্ত কমিটিতে নিরপেক্ষ শিক্ষকদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৭. ১৭৫ একর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে CCTV (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। কোনো এলাকা যেন নজরদারির বাইরে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজন হলে ডিজিটাল কার্ড বা বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের নিশ্চয়তা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। ১০. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষার্থী অন্ধকারে চলাচল করতে বাধ্য না হয়। ১১. ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রবেশের অনুমতি নির্দিষ্ট পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে দিতে হবে। ১২. মাননীয় উপাচার্য, মাননীয় উপ-উপাচার্য, মাননীয় ট্রেজারার, সম্মানিত হল প্রভোস্ট, সম্মানিত প্রক্টর ও সম্মানিত ছাত্র উপদেষ্টা তাঁদের সবাইকে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সমস্যা সমাধানে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ১৩. মেইন গেটের পাশাপাশি সকল এন্ট্রি পয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। ১৪. উপরে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা (ডেডলাইন) ঘোষণা করতে হবে এবং তার বাস্তবায়নের নিয়মিত অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে। ১৫. আমাদের দাবিসমূহ ৬ দিনের ভেতর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে এক শিক্ষার্থীর দেহ ভাসতে দেখা যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ইবি থানার ওসি মেহেদী হাসানকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার সুতপা রায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভে সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আরো কোন দাবি থাকলে পরবর্তীতে সংযোজন করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী।