শিক্ষাঙ্গন সারাদেশ

নওগাঁয় ১০ মাসেও মোস্তাফিজুর হত্যাকান্ডের রহস্য উদর্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ

সাইফুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :

 

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার মসরইল গ্রামের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র মোস্তাফিজুর (১৭) হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত উদঘার্টন হয়নি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য। তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশ ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহতের মা, বাবা ও বোন। স্থানীয়দের মধ্যেও বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা। তারা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে হত্যাকান্ডে জড়িতদের আটক পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মধইল বিএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত এসএসসি পরীক্ষা দেয় মোস্তাফিজুর। তার ঘরে এখনও ঝুলছে আইডি কার্ড, ফাঁকা পড়ে আছে শোবার ঘর। বিলাপ করছেন পরিবারের সদস্যরা। মাঝে মাঝেই মোস্তাফিজুর রহমান এর ঘরে গিয়ে ছবি আকড়ে ধরে কাঁন্না করেন তার মা। এক অজানা কারনে ঝড়ে গেল কিশোর মোস্তাফিজুরের তাজা প্রাণ।

 

যেভাবে মোস্তাফিজুর নিখোঁজ ও তার লাশ পাওয়া যায়,

গত বছর ২০২৪ এর ৬ নভেম্বর সন্ধ্যার সময় মোস্তাফিজুর মাগরিবের নামাজ পড়তে গ্রামের মসজীদে যায়। নামাজ পড়ে সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। দীর্ঘ সময় পরেও বাড়িতে না ফিরে আসায় তার পরিবারের লোকজন মসজীদে খোঁজ নেয়। মসজীদে গিয়ে তাকে না পেয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। তারপরও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের ৮দিন পর ১৩ নভেম্বর দুপুরে স্থানীয়রা মাঠে ধান ক্ষেতে কয়েকটি হাড় দেখতে পান এবং তারা সেখানে খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে ধানক্ষেতের ভেতরে একটি গর্ত দেখতে পায়। সেখানের মাটি সরিয়ে দেখে মাথা বিহীন একটি অর্ধ-গলিত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়নের শার্ট ও লুঙ্গি দেখে মোস্তাফিজুরের মৃতদেহ শনাক্ত করেন তার মা ও বাবা। পরিবারের অভিযোগ, মোস্তাফিজুরকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনার পর ১৪ নভেম্বর থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।

 

কি বলছেন ছাত্র মোস্তাফিজুরের পরিবার,

বিলাপ করে মোস্তাফিজুরের মা মোসলেমা আক্তার বলেন, ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিল মোস্তাফিজুরের। কিন্তু আমার কলিজার টুকরো সন্তানটি আর ফিরে আসেনি। তারপর রাত গড়িয়ে যায় তবুও খোঁজ পাইনা। গ্রামের অনেকের বাড়ি ও পরিচত জনদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সন্ধান পাইনি। খোঁজা-খুজিঁ করতে পেড়িয়ে যায় ৭ দিন পর ৮ দিনের মাথায় মাঠে  ধান ক্ষেতে টুকরো-টুকরো হাড়সহ অর্ধগলিত দেহ পাওয়া যায়। গায়ের কাপড় ও দেহেরে কিছু অংশ দেখে শনাক্ত করি যে ওটা আমার মোস্তাফিজুর। এর কয়েক দিন পর মাঠে মিলে তার মাথা। পুলিশ ডিএনএ টেস্ট করেও নিশ্চিত হয় যে ওটা আমার সন্তান মোস্তাফিজুর। প্রায় ১০মাস হয়ে যাচ্ছে তবুও আমার সন্তান হত্যার বিচার পাইনি। কারা মারলো, কি কারনে মারলো এসবের উত্তর আজও অজানা। আর কিছু বলতে পারছিনা বাবা এই বলেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন মা ?

 

মোস্তাফিজুরের বাবা আনোয়ার হোসেন ও বোন জিন্নাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে মোস্তাফিজুরকে। ১০ মাস কেটে গেলেও আমরা এখনো জানতে পারিনি কে বা কারা এই জঘন্যভাবে হত্যা করেছে। বিচার তো দূরের কথা, তদন্তেই কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছিনা। থানা পুলিশ একজনকে আটক করেছিল, আটকের কিছুদিন পরই সেও জামিনে বর্তমানে মুক্ত রয়েছে। কারন সুনিনির্দিষ্ট প্রমাণ নাকি পাওয়া যায়নি তার বিরুদ্ধে। তাই আরও তদন্ত চলছে। সন্দেহভাজন হিসেবে আমরা মামলায় এজাহারে কিছু নাম যুক্ত করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ তা গ্রহণ করেননি। তারা মাঝে মাঝে আসে আবার চলে যায়। কি তদন্ত হচ্ছে সঠিক না কি সেটা আমরা বুঝতে পারছিনা। এতদিন হয়ে গেল আসামীদের আটক বা কি কারনে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো সেটাও উদর্ঘাটন হয়নি। এভাবে আর কতদিন মাস চলবে আমরা কত ধৈর্য্য ধরে থাকবো। যার আপনজন হারায় সেই বুঝে কতটা ব্যাথা আর যন্ত্রনা হয়। দ্রুত সঠিক বিচার চাই আমরা। এভাবে যেন আর কোন সন্তানকে খুন হতে না হয়।

 

স্থানীয়রা যা বলছেন,

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আবুল হোসেন, মসজিদের মোয়াজ্জিন আবুল কালাম আজাদ ও স্থানিয় ইউপি সদস্য মনছুর আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, নিহত মোস্তাফিজুর ছিলেন শান্ত-শিষ্ট ও ভদ্র ছেলে। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন এবং সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। মোস্তাফিজুর কারও সাথে কোনোদিন খারাপ ব্যবহার করেননি। তারপরও তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাটি কেউ মেনে নিতে পারছিনা আমরা।প্রশাসনের কাছে দাবি দ্রুত তদন্ত শেষ করে হত্যার সাথে জড়ীতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। সেই সাথে এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে এমন নেক্কারজনক কাজ যেন কেউ করতে সাহস না পায়।

 

এব্যাপারে প্রশাসন যা বলছেন, নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মাহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বিপিএম জানান, ১৩ নভেম্বর স্থানীয়রা মাঠের মধ্যে একটি মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পত্নীতলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দেহের উদ্ধার করেন। প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত না হওয়ার কারনে ডিএনএ পরিক্ষার মাধ্যমে জানতে পারি মৃতদেহটি মোস্তাফিজুরের। তদন্ত কার্যক্রম আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তদন্তে প্রমান পাওয়া যায়নি তার বিরুদ্ধে। তবে বাদী পক্ষের একটি অভিযোগ আছে যে, তারা আরও কয়েক জনের নাম তারা বলতে চাচ্ছেন। আমাদের তদন্ত কার্যক্রমে অন্যকারো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাচ্ছিনা। যখনই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাবো তখনই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলার এই পুলিশ প্রধান আরো বলেন, আমরা চাইনা কোন নিরপরাধ কেউ সাঁজা প্রাপ্ত হোক। আমরা যথাযথ ভাবে যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে পকৃত দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশ স্লো কাজ করছে না। আমরা ফরেনসিক রিপোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করছি। তদন্তে আমরা মোটামুটি একটা পর্যায়ে চলে এসেছি। ফরেনসিক রিপোর্টটি হাতে পেলে আমরা চুড়ান্ত চার্জসিটের দিকে চলে যাবো।

 

অপরদিকে মোস্তাফিজুরের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজনরা মনে করছেন, তদন্তে উদাসীনতার কারণে বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। প্রশাসন ও সরকারের প্রতি তাদের  জোর দাবি দ্রুত এই হত্যা কাণ্ডের রহস্য উদর্ঘাটন করে জড়ীতদের আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,