জুলাই বিপ্লব শুধু ফ্যাসিবাদ নয় সার্বভৌমত্ব লুন্ঠনকারী ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও ছিল – মাহমুদুর রহমান

ইবি প্রতিনিধি:
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবীরা রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যকে মোকাবেলা করেছে এবং পরাজিত করেছে। এভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে তারা। বিশ্বের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন বিপ্লব বলে আমি মনে করি। এই বিপ্লবটি বাংলাদেশের জনগনের ওপরে যে ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছিল শুধু তাদের বিরুদ্ধে নয় বরং স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব লুন্ঠনকারী ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধেও ছিল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লব বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই ‘বিপ্লব নাকি অভ্যুত্থান’ এই প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না। বরং শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল। তাই শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলনকে বিপ্লব বলে অবিহিত করি। বিপ্লব মাত্র ৩৬ দিনে শেষ হয় না বরং একটা পর্যায়ে অবস্থান করে। রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট-সহ অভ্যন্তরীন ও বর্হিবিশ্বের হুমকি থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব চলমান থাকবে।
সভায় জুলাই বিপ্লবের বিপদের আশংকা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের জন্য দেশের দুইটি থ্রেট বা বিপদের কথা বলবো যা দুই দিক থেকে আসবে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বিপদ বলতে আমাদের দেশের সকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের দালাল ও ভারতের আধিপত্য দালালদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনুপ্রবেশকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে চাইবে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। গতকাল সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারতীয় দালাল ‘র’ এর এজেন্টদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল আমরা তাদের নিয়ে পত্রিকায় ক্রমাগতভাবে খবর প্রকাশ করেছি। এমন একটা সময় ছিল সামরিক বাহিনী নিয়ে খবর প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করত। এই দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার যুগটা পার করে এসেছি। এই ‘র’ কিংবা ভারতের দালালদের মুখোশ উন্মোচন না করলে বিপ্লব দীর্ঘজীবী হবে না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আরেকটা বিপদ হচ্ছে এক্সটার্নাল থ্রেট যা আমার দেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা নিয়ে। যেহেতু আমাদের দেশের চারপাশে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে হিন্দু বা বৌদ্ধিস্ট রাষ্ট্র। সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে সজাগ থাকতে হবে।
আসন্ন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, অন্যদিকে ভারত আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী কারণ তাদের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বর্হিবিশ্বের হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষিত তরুণরাই যথেষ্ট।
সর্বশেষ তিনি জুলাই বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, জুলাই বিপ্লবীদের সাথে ভালো আচরণ করুন। তাদের সম্মান করতে শিখুন। ভারতীয় এজেন্ডার বিরুদ্ধে ও ইসলামের প্রশ্নে বাংলাদেশের তরুণদের দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করে।
উল্লেখ্য, বর্ষপূর্তি উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা। ৩৬ জুলাইয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আনন্দ র্যালি-সহ জুলাই স্মৃতিকথা মোড়ক উন্মোচন ও জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হয়।