দুর্যোগে হাওরের মাটিতে টিকে থাকার লড়াই:লোকায়ত অভিযোজনই ভরসা
ডেস্ক রিপোর্ট :জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করে হাওরে টিকে আছে কৃষকেরা।বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক) এর আয়োজনে ও দাতা সংস্থা অক্সফামের সহযোগিতায় গোবিন্দশ্রী উচাঁহাটিতে সালমা বেগমের “কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দে” জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা ও হাওর অভিযোজন কৌশল বিষয়ক” দু‘দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সভাপতি ছিলেন উচাহাটি কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কৃষানি সালমা আকতার, প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারসিকের নেত্রকোনা অঞ্চলের সহযোগি সমন্বয়কারী শংকর ম্রং। আরো উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের বারঘরিয়া, উচাহাটি, মাঝিপাড়া, পশ্চিমপাড়া, শান্তিপাড়া, বারঘরিয়া, মদন ইউনিয়নের উচিতপুর, আরগিলা, দক্ষিণমদন ও কুলিয়াটি গ্রামের ২৬ জন কৃষক-কৃষানি-যুবক-কিশোরী। কর্মশালায় কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, আবহাওয়া, জলবায়ু,দুর্যোগ,জলবায়ু ন্যায্যতা,হাওরের কৃষিক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবেলায়অভিযোজনকৌশল, খাদ্যসার্বভৌমত্ব,দুর্যোগ মোকাবেলায় হাওরের নারীর অভিযোজন কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
আগাম বন্যা, ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি, বর্ষাকালে সবজীর জন্য বাজার নির্ভরশীল, অনিয়মিত বৃষ্টি, হাওরের পানি সময়মতো নামছেনা, অনিয়মিত তাপমাত্রা,বোরো মৌসুমে ও বোরো ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট হয়, কীটনাশকের অবাধ ব্যবহারে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে ও হাওরের মাছ কমে যাচ্ছে, বসতভীটা নষ্ট হয় বন্যায় ও টেউয়ের কারণে, চৈত্রমাসে পানি সংকট দেখা দেয়, ঘনকুয়াশায় ফসলের ক্ষতি, ঢেউয়ে বসতভীটায় ভাঙ্গন, ঠান্ডায় ফসলের ক্ষতি,ফসলের রোগবালাই বেশী, গরম ও তাপদাহে ফসলের ক্ষতি, বসতভীটায় স্থান কমসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এসব সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য অভিযোজন কৌশলও বর্ননা করেন।
কৃষক-কৃষানি-যুবক-কিশোরীরা দলীয় কাজের মাধ্যমে হাওরের সমস্যাগুলো সমাধানের অভিযোজন কৌশল তুলে ধরেন। হাওরের ডোবায় প্রাকৃতিক পানি সংরক্ষণে রাখেন এবং চৈত্র বৈশাখ মাসে সংরক্ষিত পানি থেকে সেচ প্রদান করেন ,রাসায়নিক সারের পরিবর্তে খুব অল্প পরিমানে গোবর সার অথবা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে, ফসলের রোগবালাইয়ের জন্য জৈববালাইনাশক তৈরী করে ব্যবহার করেন অল্প পরিমান, বসতভীটা রক্ষার জন্য বাড়ীর চারপাশে ভেন্নাগাছ, উজাওরি, মুর্তাগাছ, কুচুরিপানা, হিজল করচ রোপন করেন। বর্ষাকালে শাকসবজীর অভাব পূরণের জন্য বস্তাপদ্ধতি, টাওয়ার পদ্ধতি, ঝুলন্ত সবজী চাষ, মাছা পদ্ধতিতে পানির উপর সবজী চাষ করেন,সেচের জন্য ডুবায় প্রাকৃতিক পানি ধারণ, দুর্যোগের আগেই প্রস্তুতি গ্রহনকরেন, বর্ষাকালে বাড়ির উঠানে বীজতলা তৈরী, স্থানান্তরিত চুলা ব্যবহার করা হয়, উগার পদ্ধতিতে খড় সংরক্ষণ ঘরের চাল ব্যবহার করে উৎপাদন করে,স্থানান্তর পদ্ধতিতে চারার বীজতলা তৈরী করেন। কর্মশালা শেষে উচাহাটি গ্রামে সালমা আক্তারের কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন অংশগ্রহনকারীরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর আব্দুর রব।



