পটুয়াখালীতে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা,পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ- এ বছর পটুয়াখালীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই মুক্ত পরিবেশে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকেরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লাভের মুখ দেখছেন। জেলার দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত তরমুজ প্রতিদিন শত শত ট্রাকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশেষত রমজান মাসে তরমুজের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের রামনাবাদ নদীর তীরে অবস্থিত মোকাম অন্যতম প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ট্রাকে তরমুজ পরিবহন হচ্ছে, যার পাইকারি মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। অন্যান্য মোকাম, যেমন কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, বাউফল ও গলাচিপা থেকেও প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ ট্রাকে তরমুজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।

রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশা ইউনিয়নের কৃষক মওদুদ খালিফা জানান, এ বছর তিনি ৩ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা, আর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার তরমুজ। গলাচিপার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের কৃষক জসীম উদ্দিন জানান, তার ২ কানি জমিতে প্রায় ৮ লাখ টাকার তরমুজ উৎপাদন হয়েছে, যেখানে খরচ ছিল ৩ লাখ টাকা।
রামনাবাদ নদীর তীরবর্তী মোকামগুলোতে দিন-রাত ট্রলার আসছে এবং শ্রমিকরা তা ট্রাকে তুলছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু আমখোলা মোকাম থেকেই প্রতিদিন ৮ কোটি টাকার তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক চালক সালমান হোসেন জানান, এ বছর ট্রাক ভাড়া কিছুটা কম হওয়ায় লাভের পরিমাণ সামান্য কমেছে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ২৮,৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ৮,৬৬,৮৪৮ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া, বাউফল, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপাসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঠিক পরামর্শ ও সহায়তার কারণে কৃষকেরা এবার ক্ষতির মুখে পড়েননি। তবে কিছু এলাকায় জলকপাট বিকল থাকায় লবণাক্ত পানির সমস্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তরমুজের এ বিশাল সরবরাহ ও বাণিজ্য পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সুষ্ঠু অবকাঠামো ও আরও সমন্বিত পরিকল্পনা নিলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের তরমুজ চাষ আরও লাভজনক হতে পারে।