ভিক্ষা করে বড় করা ছেলেদের ঘরেই ঠাঁই নেই মায়ের

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ- পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামে মানবতার মর্মন্তুদ এক চিত্র আজ গোটা সমাজকে নাড়া দিচ্ছে। শতবর্ষী লালবড়ু বেগম, যিনি এক সময় নিজের জীবন-সংগ্রাম ভুলে ভিক্ষা করে সন্তানদের বড় করেছেন, আজ তাকে ঠাঁই পেয়েছেন একটি পুরনো মুরগির খোপে! এই দৃশ্য যেন মানবিকতার মুখে এক কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
দুই দশক আগে স্বামী হারিয়ে দেন লালবড়ু। তখন থেকেই শুরু হয় তার একার সংগ্রাম। ভিক্ষার টাকায় দুই ছেলে মোস্তফা ও নাসিরকে বড় করেন, মুখে তুলে দেন খাবার, পড়ান লেখাপড়া। কিন্তু সময় ঘুরেছে, সন্তানরা বড় হয়েছে, নিজের পরিবার হয়েছে—কিন্তু সেই মায়ের জন্য আর ঘরে জায়গা হয়নি।
বর্তমানে বড় ছেলে মোস্তফার ঘরের উঠানে একটি কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি মুরগির পুরনো খোপই তার একমাত্র আশ্রয়। যেখানে নেই ঠিকমতো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, নেই শোয়ার পর্যাপ্ত জায়গা, নেই নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। একটি মাদুর, ছেঁড়া কাঁথা আর কিছু পুরনো কাপড়ই তার জীবনের সম্বল।
মোস্তফার পরিবার বর্তমানে বসবাস করছে অন্যের জমিতে তৈরি এক অস্থায়ী টিনশেড ঘরে, যেটি প্রায়ই জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। প্রতিদিন সকালে মোস্তফা অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান, তার স্ত্রী রিনা বেগম যান গৃহকর্মে। তারা ঘরে তালা মেরে রেখে যান লালবড়ুকে। একা চলাফেরা করতে না পারা লালবড়ু খোপেই কাটান দিনরাত।
চোখে পানি এনে দেওয়া কণ্ঠে লালবড়ু বলেন, “আমি সারাদিন খোপেই বসে থাকি। রাতে ঘুম হয় না, শরীর ব্যথা করে, গরমে দম বন্ধ হয়। খাওয়া জোটে মাঝে মাঝে, না পেলে আবার ভিক্ষা করতে হয়।”
সম্প্রতি উঠানে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান, হাত ভেঙে যায়, কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
ছেলের বউ রিনা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, অনেক কষ্টে আছি। শাশুড়ি একা টয়লেটেও যেতে পারেন না। ঘরটাও উঁচু, উনি উঠতে পারেন না। তাই খোপে রাখি।”
নাতি শিপন বলেন, “দাদি যে কষ্টে আছেন, তা চোখে দেখা যায় না। আমি চাকরি হারিয়েছি, সাহায্য করারও ক্ষমতা নেই।”
স্থানীয় ইটভাটার ম্যানেজার মাসুদ হাওলাদার জানান, “এই পরিবার ভূমিহীন, সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পায় না। একজন মাকে শেষ জীবনে যেন একটু শান্তিতে রাখা যায়, এটা আমাদেরই দায়িত্ব।”