শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে
রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন। উপজেলার কৃষকদের প্রধান ফসল আমন ধান।
আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় কৃষকরা অনেকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছেন। মুন্সিগঞ্জ ইউপির ধানখালী গ্রামের আমন চাষি ধনঞ্জয় বৈদ্য, সুবোল সরদার বলেন এবার ফলন সোনার ফলন। যেমন পুষ্ঠ তেমনি শিষ ভাল।
কৃষক সাগরিকা রানী বলেন বছরের এ সময় আমন ফসল ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। এ ফসলের ভাল মূল্য পেলে মেয়েকে লেখাপড়া শেখানো সহ পাত্রস্থ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপির খোসালখালী গ্রামের আমন চাষি মিজানুর রহমান বলেন বিঘা প্রতি আমন ধান পাওয়া গেছে ১৮ থেকে ১৯ মণ। আশানুরুপ ফলন হয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ফলন ভাল হওয়ার কারণ হিসাবে কৃষকরা জানান প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অন্য কোন প্রকার দূর্যোগ না থাকা। তিনি আরও বলেন মাঠ থেকে আমন ফসল ঘরে উঠানো প্রায় শেষ পর্যায়ে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে প্রকাশ শ্যামনগর উপজেলায় আমন ধান আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৮ শত পঁয়ত্রিশ হেক্টর। গতবারের তুলনায় এবার আমন আবাদের এরিয়া বেশি ছিল। গতবার আমন ধান আবাদ হয়েছিল ১৬ হাজার ৮ শত হেক্টর। প্রতি বছর আমন ফসলের আবাদ বাড়ছে বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়। এবার আবাদকৃত আমনের মধ্যে হাইব্রিড আবাদ হয়েছে ৬৫০ হেক্টর। উফসি আবাদ ১৬ হাজার ১শত পঞ্চাশ হেক্টর এবং স্থানীয় আবাদ হয়েছে ৩৫ হেক্টর। ফলনে প্রাপ্তি হয়েছে চাউলে হাইব্রিড হেক্টর প্রতি ৩.৯ মেট্রিকটন,ধানে ৫.৮৫ মেট্রিক টন। উফসি চাউলে হেক্টর প্রতি ২.৯ মেট্রিকটন, ধানে ৪.৩৫ মেট্রিকটন। স্থানীয় চাউলে হেক্টর প্রতি ২.৪ মেট্রিকটন, ধানে ৩.৬ মেট্রিকটন। মণ হিসাবে হাইব্রিড বিঘা প্রতি ১৯.৫ মণ, উফসি ৪.৩৫ মণ ও স্থানীয় ৩.৬ মণ।
উপজেলায় কৃষক পরিবার সংখ্যা ৭৬ হাজার। বারটি ইউপির মধ্যে ঈশ^রীপুর, মুন্সিগঞ্জ,নুরনগর, ভূরুলিয়া, রমজাননগর, শ্যামনগর ইউপি বেশি পরিমান আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। শ্যামনগর উপজেলায় লবন পানির চিংড়ী চাষের প্রাধান্য থাকলেও চিংড়ীতে লাভবান কম হওয়ায় দিনে দিনে আমন ফসল সহ অন্যান্য কৃষি পসল আবাদের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছে। এর ফল স্বরুপ আমান, বোরো ধানের আবাদ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি অফিস জানায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৩ শত দশ হেক্টর। কিন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো চাষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন।
বিগত বছরে আমন ফসল চাষের পূর্বে কৃষি অফিসের আয়োজনে ২ হাজার ৯০০ জন কৃষকদের মধ্যে প্রনোদনা দেওয়া হয় ধান বীজ ও সার। এর মধ্যে ঘূর্নিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্থ ১ হাজার ৩০০ জন কৃষকের মধ্যে প্রনোদনা প্রদান করা হয়। প্রতি কৃষকের ৫ কেজি ধান বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃত ধান বীজের মধ্যে ছিল ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, বিনা-১৭, ব্রি ধান-৯৩ ও ৯৫ ও ব্রি-৪৯।
উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন এবার শ্যামনগরে কৃষকরা আশানুরুপ আমন ফসল পেয়েছে। তিনি বলেন উপকুলের শ্যামনগর থেকে স্থানীয় জাতের ধান চিনি কানি, নারকেল মুছি,পাজাম ধান কৃষক পর্যায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।