হাটহাজারীতে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা হলে বৃদ্ধি পাবে বোরো আবাদ,অতিরিক্ত পাওয়া যাবে ২৪ কোটি টাকার ফসল: প্রয়োজন উদ্যোগ
হাটহাজারী প্রতিনিধি:
হাটহাজারীতে সেচের অভাবে বোরো মৌসুমে উপজেলার ও পৌরসভার মাঠজুড়ে অনাবাদি পড়ে থাকে কয়েক হাজার হেক্টর জমি। এতে ব্যহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। অর্থনৈতিকভাবে লোকসান গুনছেন প্রান্তিক কৃষকরা। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা লোকসান গুনলেও যথাযত ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। তবে সেচের পর্যাপ্ত পানির উৎস্য থাকায় একটু উদ্যোগেই পাল্টে যেতে পারে বোরোর আবাদ। জানা গেছে, চলতি মৌসুমের আমনের পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকরা। অনেকেই পরবর্তী বোরো চাষের জন্য বীজ, সার, সেচ যন্ত্রের হিসাব কষছেন। তবে যে পরিমান আমন চাষ করে ফসলের উৎপাদন তা বোরো আবাদে সম্ভব নয় সেচের অভাবে। আমনের তুলনায় অর্ধেক চাষ হয় বোরোর। সমস্যাটি প্রায় চার দশক থেকে শুরু হয়েছে। একসময় খাল বিল, পাহাড়ি ছড়ায় পর্যাপ্ত পানি থাকার কারণে বোরো মৌসুমেও আবাদের পরিমান আমনের কাছাকাছি ছিল। কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে পাহাড়ি ছড়া আর খাল ভরাটের কারণে তা হ্রাস পেয়েছে। তবে আধুনিক এ যুগে পাহাড়ি ছড়া, হালদার সাথে সংযুক্ত শাখা খালগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে পুনঃখননের পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে বোরো আবাদ বৃদ্ধি পাবে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৪ হাজার ৬ শ হেক্টর যাতে উৎপাদিত হবে ২৫ হাজার ৩ শ মেট্রিক টন ধান। যার বাজারমূল্য ৯১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। এবার আরো এক হাজারের অধিক হেক্টর বোরো চাষাবাদের আওতায় আনার চেস্টা চলছে। নেয়া হচ্ছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। স্থানভেদে পৌরসভার ওয়ার্ড ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে খালের পুনঃখনন, বারিক পাইপ, এলএলপি, গভীর নলকূপ স্থাপন, স্লুইচ গেইট নির্মাণসহ অন্যান্য সেচ অবকাঠামো নির্মাণে এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন(ইউপি), কৃষি বিভাগ ও বিএডিসি’র সমন্বয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে বোরো আবাদ বৃদ্ধি নয় কেবল কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে হাটহাজারীতে। কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের তথ্যমতে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ২৫৯ হেক্টর হলেও নাজিরহাট কলেজ সংলগ্ন বিলে একটি এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপন ও শান্তিরহাট বাজারের উত্তর পাশে স্লুইচ গেইট নির্মাণে আবাদ বৃদ্ধি পাবে ১৯৫ হেক্টর, ধলই ইউনিয়নের পশ্চিম ধলই বাদশাহ রাস্তার বিলে গভীর নলকূপ স্থাপন, পূর্ব ধলই সেকান্দর পাড়া দক্ষিণ বিল ও পশ্চিম ধলই শায়ের মোঃ চৌধুরী বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপন এবং এনায়েতপুরে সোনাই খাল সংস্কারে আবাদ হবে ১শ ৫১ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি, মির্জাপুর ইউনিয়নে খিল্লাপাড়া ও খলিফা পাড়ায় গভীর নলকূপ ও মুছার দোকান সংলগ্ন দেয়ানংছড়া খাল সংস্কারে আবাদ হবে ৩ শ ৬৫ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ১ শ ৫০ হেক্টর বেশি, গুমানমর্দ্দনে গুমানমর্দ্দন বিল ও জোরারখাল সংলগ্ন এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপনে আবাদ হবে ৭ শ ৯৭ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৪০ হেক্টর বেশি, নাঙ্গলমোড়ার উত্তর ডেবার বিল ও বরিগ্যার চর এলাকায় এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপনে আবাদ হবে ১শ ৪২ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি, ছিপাতলীতে লুদি তালুকদার বিল, দক্ষিণ কাজিরখীল বিল ও ঈদগাহ বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপন এবং ছিপাতলী খাল ও বইচ্যাছড়া খাল সংস্কারে আবাদ হবে ২ শ ৪২ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি, পৌরসভার মিরেরখিল বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ ও ফটিকা বিলের খাল সংস্কারে আবাদ হবে ৫শ ৩০ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ১ শ ৮০ হেক্টর বেশি, মেখলে দয়ামীয় ও নাপিত্যার বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপনে আবাদ হবে ৬ শ ৩২ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৩০ হেক্টর বেশি, গড়দুয়ারায় কামদর আলী হাট বাজার সংলগ্ন দক্ষিণের বিলে সোলার চালিত বারিক পাইপ স্থাপনে আবাদ হবে ১ শ ৯১ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ২০ হেক্টর বেশি, উত্তর মাদার্শায় বোয়ালিয়া বিল ও মাদার্শা বিলে এলএলপি, বারিয়াঘোনা ও উরকিরচর এর মাঝখালে পুরাতন হালদা নদী, বারিয়াঘোনা ও খলিফারঘোনার মাঝখানে হালদা নদীতে স্লুইচ গেইট স্থাপনে আবাদ হবে ৩ শ ৬৪ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৬০ হেক্টর বেশি, দক্ষিণ মাদার্শায় নেহালপুর সংলগ্ন মাঝের বিলে এলএলপি স্থাপনে ৪ শ ৩ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি, ফতেপুরে দুলাইর পাড়া দক্ষিণ বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপন এবং তেভাগা খামার সংলগ্ন বড়ুয়াপাড়া বিলে পাকা সেচ নালা স্থাপনে ৬ শ ১০ হেক্টর আবাদ হবে যা পূর্বের তুলনায় ১ শ ২০ হেক্টর বেশি, চিকনদন্ডীতে ইছামতি খাল, আমানবাজার এনায়েত বাড়ি সংলগ্ন খাল সংস্কার ও গভীর নলকূপ স্থাপন এবং মায়ার বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপনে ৩ শ ৫ হেক্টর আবাদ হবে যা পূর্বের তুলনায় ৬৫ হেক্টর বেশি, শিকারপুরে বাইজ্যাখালী খাল, ঈদগাঁও খাল ও বড়াইছড়ি খাল সংস্কার এবং কৃষ্ণখাল ও শীতলঝর্ণা খালে ট্যানারির পানি রোধে আবাদ হবে ১ শ ১৩ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ৪০ হেক্টর বেশি, বুড়িশ্চরে বুড়িশ্চর খাল সংস্কার, রাজারবিল ও তালতলা বিলের পানি নিষ্কাশনে জলাবদ্ধতা দূরিকরণ ও তালুকদারবাড়ি বিলে এলএলপি ও বারিক পাইপ স্থাপনে আবাদ হবে ৭৮ হেক্টর যা পূর্বের তুলনায় ১৫ হেক্টর বেশি, দক্ষিণ পাহাড়তলীতে মাহমুদাবাদ উত্তর ও দক্ষিণ বিলে চারটি ও ছড়াকুল বিলে দুটি আর্টিশান কূপ নির্মাণে ৩শ ৩৩ হেক্টর আবাদ হবে যা পূর্বের তুলনায় ৫ হেক্টরসহ মোট ১ হাজার ১শ ২০ হেক্টর বেশি। এতে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে ৬ হাজার ৭৬০ মেট্রিকটন যার বাজারমূল্য দাড়ায় ২৪ কোটি ১৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রায়।
বিএডিসি’র উপ-সহকারী কর্মকর্তা দীপন চাকমা বলেন, ইতিমধ্যে চিকনদন্ডী ও গুমানমর্দ্দনে ২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্তে খাল পুনঃখনন, বারিক পাইপ, এলএলপি ও আর্টিশিয়ান কূপ নির্মাণের প্রস্তাবনা পেলে বিএডিসি’র বরাদ্দ সাপেক্ষে কাজের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন চতুর্দিকে প্রচুর পানির উৎস্য অথচ আমনের চাইতে বোরো আবাদ অর্ধেকের চাইতে কম। একটু উদ্যোগে অনেকাংশে এ সমস্যা নিরসন সম্ভব। উপজেলা প্রশাসন ও বিএডিসির সাথে এ নিয়ে আলাপ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, বিষয়টা অবগত হয়েছি। চাহিদানুযায়ী সেচের বাস্তবায়ন হলে বোরো আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং বসতবাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।


