পাইকগাছা হাসপাতালে সেবা নিতে রোগীদের চরম ভোগান্তি ডাক্তার ও জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা হুমকির মুখে

এম জালাল উদ্দীন:
খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের ২৪টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭ জন চিকিৎসক। ফলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনগণের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন আউটডোরে গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এবং ইনডোরে ভর্তি থাকেন প্রায় ১৫০ রোগী। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকেও রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে সীমিত জনবল ও সম্পদের মধ্যে পরিচালিত এই হাসপাতাল কার্যত চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
২০১৫ সালের ৫ মার্চ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়ানো হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, শিশু রোগ, গাইনি, নাক-কান-গলা, হৃদরোগ, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, চর্ম ও যৌন রোগ, ইনডোর এবং ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ পদ।
চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও সহায়ক কর্মচারী সংকটও প্রকট। হাসপাতালের ২৩৭টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৪০ জন, বাকি ৯৭টি পদ শূন্য। এর মধ্যে ১৫টি পদ বহু বছর ধরে সম্পূর্ণ শূন্য রয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে,জুনিয়র কনসালটেন্টের ৪টি পদের মধ্যে মাত্র ২টি পূরণ, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য, মেডিকেল অফিসারের ৬টি পদের মধ্যে কর্মরত ৪ জন,সিনিয়র স্টাফ নার্স ৩২ পদের বিপরীতে রয়েছেন ২৩ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৭ পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১ জন,স্বাস্থ্য সহকারী ৬৫ পদের বিপরীতে রয়েছেন ৪৫ জন।
এছাড়া কার্ডিওগ্রামার, নার্সিং সুপারভাইজার, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বেশ কিছু পদ একেবারেই শূন্য রয়েছে।
শুধু জনবল সংকট নয়, রোগীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে নানা অব্যবস্থাপনা। হাসপাতালে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, অপারেশন সরঞ্জামের ঘাটতি, পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যাসহ নোংরা বাথরুম এবং তেলের অভাবে জেনারেটর চালু না থাকার মতো গুরুতর সমস্যা। খাদ্য পরিবেশনে অনিয়ম এবং আল্ট্রাসনোলজিস্ট ও মালি না থাকায় সনোগ্রাফি সেবা ও বাগান পরিচর্যাও ব্যাহত হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, একজন চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা শহরের দিকে রওনা হন। তারা অবিলম্বে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবর রহমান জানান, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল ও সরঞ্জাম বাড়ানো হয়নি। চিকিৎসক ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট রয়েছে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি পূরণ না হলে সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায়, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, পাইকগাছার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করা হোক, নইলে এখানকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিতই থেকে যাবে।