বেতনা নদীর নবজন্মে সাতক্ষীরার জলবদ্ধতা মুক্ত কৃষি বিপ্লব

মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরা ::
সাতক্ষীরার অববাহিকায় বেতনা নদী খনন ও সংযোগ খাল পুনরুদ্ধারেএক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ফলে বেতনা অববাহিকায় নিরব কুষি বিপ্লবে আত্মহারা নদী বেষ্টিত এলাকার মানুষ। জেলার তালা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি-এই পাঁচ উপজেলার প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ দীর্ঘদিনের জলবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে পেয়েছে কৃষি ও জীবিকার নবজীবন।
২০০০ সালের পর দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় বেতনা নদীকে ২০২১ সালে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ৩৫০ কোটি টাকার ব্যায়ে খননে পুনরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে বেতনা। ২৫০ কিলোমিটার সংযোগ খাল খনন সহ বেতনা নদীর ৪৫ কিলোমিটার ও মরিচ্চাপ নদীর ৩৫.৫ কিলোমিটার খননে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যার সুফল মিলেছে চলতি বর্ষা মৌসুমেই।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর সাতক্ষীরায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ১৬৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫৭৬ মিলিমিটার বেশি। গত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল এ জেলায় ১১১৫ মিলিমিটার।অথচ এবার কোনো গ্রাম তলিয়ে যায়নি, ফসলের মাঠ রক্ষা পেয়েছে, মাছের ঘের ভেসে যায়নি। বরং ধান, পাট, কুল, আমসহ নানা ফসলের মাঠে ফিরেছে হাসি, মাছের খামারে ফিরেছে স্বপ্ন।
তালা উপজেলার তৈলকুপী গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের সরদার জানান, এবার ঘের তলিয়ে যায়নি। ৫ বিঘা জমির ঘেরের বেঁড়িতে লাগানো সবজি থেকে প্রতি সপ্তাহে আয় হচ্ছে ১৫-১৮ হাজার টাকা, আর বাগদা চিংড়ি বিক্রি করছি ১০ হাজার টাকার মতো। এমন স্বাবলম্বী কৃষকের সংখ্যা হাজার হাজার, যারা জেলার অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা পাউবো-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া বলেন, খনন কাজ শেষ হওয়ার আগেই মানুষ সুফল পাচ্ছে-এটাই আমাদের বড় অর্জন। পলি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও জনগণের সচেতনতা নিশ্চিত করতে পারলেই এই সফলতা স্থায়ী হবে।
২০২৩ সালের শুমারী অনুযায়ী,বেতনা নদীর অববাহিকার ৫ উপজেলার সরাসরি উপকারভোগীর সংখ্যা ১৩,৯২,৮১৬ জন। শুধু জলাবদ্ধতা নয়, নদী খননের ফলে সৃষ্টি হয়েছে মিষ্টি পানির আঁধার, যা শুষ্ক মৌসুমে সেচের অন্যতম উৎস হয়ে উঠবে। ফল,মাছ সবজি ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে ইতিমধ্যেই যে বিপ্লব সূচিত হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে সাতক্ষীরায় কৃষি হবে আত্মনির্ভরতার প্রতীক।