সাদুল্যাপুরে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন।

বায়েজিদ, (পলাশবাড়ী) গাইবান্ধা:
সাদুল্যাপুর হাইস্কুল মাঠে ছিল এক গভীর, অথচ অনাড়ম্বর উচ্ছ্বাস। বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধনে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিল—কেউ কর্মী, কেউ শুভাকাঙ্ক্ষী, কেউ বা নিঃশব্দ প্রত্যাশায় মুখর জনতা। কিন্তু সেই বিকেলটিকে আলাদা করে তুলেছিল একজন মানুষের উপস্থিতি—অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক। তিনি কেবল প্রধান অতিথি নন; ছিলেন একজন চিকিৎসক, শিক্ষক, সমাজসেবক এবং সবচেয়ে বড় কথা, এক নতুন রাজনৈতিক মানসিকতার প্রতীক।
যখন তিনি মঞ্চে দাঁড়ালেন, তখন চারদিক যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। মাইক্রোফোনে ভেসে এলো তাঁর শান্ত, অথচ দৃঢ় কণ্ঠ— আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়। আমার রাজনীতি সেই শিশুটির মুখের হাসির জন্য, যে আজও স্কুলে যেতে পারে না। আমার রাজনীতি সেই কৃষকের ঘামের জন্য, যে ন্যায্য দাম পায় না। আর আমার রাজনীতি সেই মায়ের নিঃশব্দ প্রার্থনার জন্য, যার সন্তান বিদেশে বা জেলে—কেবল স্বপ্ন দেখে এক ন্যায়ের বাংলাদেশ।”
এই একটি বাক্যই যেন সাদুল্যাপুর হাইস্কুল মাঠের প্রতিটি মানুষকে নাড়া দিয়ে গেল। কারণ, তাঁরা বুঝলেন—এই মানুষটি রাজনীতি করেন হৃদয় দিয়ে, প্রতিশ্রুতি নয়; দায়িত্ববোধ দিয়ে, স্বার্থ নয়।
ডা. মইনুল হাসান সাদিক তাঁর ভাষণে বললেন,
“আজ আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। মানুষ পরিবর্তন চায়, কিন্তু ভয় পায়। আমি চাই এই ভয়টাকে ভাঙতে—মানুষ যেন বুঝতে পারে, রাজনীতি মানে সংঘাত নয়, সমাধান; রাজনীতি মানে বিভাজন নয়, ঐক্য।”তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি হলো “নতুন রাজনৈতিক আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া।”
এই নবায়নের মাধ্যমে আমরা খুঁজে বের করতে চাই সেই সব কর্মীদের, যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও দলের পতাকা বহন করেছে, যারা মানুষের পাশে থেকেছে কোনো প্রতিদানের আশায় নয়। আমরা এমন একটি বিএনপি চাই, যে বিএনপি আবার মানুষের ঘরে ফিরে যাবে—গ্রামে, খেতখামারে, হাটে, চায়ের দোকানে, মানুষের পাশে।”
তিনি বলেন,- সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী—এই দুই উপজেলার প্রতিটি পরিবারই আমার পরিবার। আমি এই মাটির সন্তান, এই মাটির মানুষদের নিয়েই আমার রাজনীতি। আমি চাই প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলুক, প্রতিটি যুবক কাজ পাক, প্রতিটি মা তার সন্তানকে নিরাপদে স্কুলে পাঠাতে পারুক। উন্নয়ন তখনই অর্থবহ, যখন তা পৌঁছায় মানুষের দরজায়।”
ডা. সাদিক আরও বলেন,-আমি চিকিৎসক হিসেবে মানুষের দেহের রোগ সারিয়েছি, কিন্তু এখন সময় এসেছে সমাজের রোগ সারানোর। দুর্নীতি, বৈষম্য, ভয়—এগুলোই আমাদের সামাজিক অসুখ। এই অসুখের চিকিৎসা করতে হলে লাগবে সত্যবাদী নেতৃত্ব, লাগবে সহমর্মিতার রাজনীতি।”
তার ভাষণে একাধিকবার ফিরে আসে মানবিকতার আহ্বান। তিনি বলেন,- আমার স্বপ্ন, সাদুল্যাপুর হবে মানবিক উন্নয়নের মডেল উপজেলা। এখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, কেউ বেকার থাকবে না, কেউ অবহেলিত থাকবে না। উন্নয়ন মানে কেবল রাস্তাঘাট নয়; উন্নয়ন মানে মানুষের আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া।”রাজনীতিতে নৈতিকতার জায়গাটি তিনি অনন্যভাবে ব্যাখ্যা করেন:- “রাজনীতি তখনই টিকে থাকে, যখন মানুষ নেতৃত্বে সততার ছায়া খুঁজে পায়। আমি চাই এমন এক রাজনীতি, যেখানে মিথ্যা থাকবে না, প্রতারণা থাকবে না, থাকবে কেবল সত্য, ত্যাগ আর দায়িত্ববোধ।”
তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন,-“আমি বিশ্বাস করি, এই দেশের মানুষ এখনো সৎ রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস রাখে। তারা আজও খুঁজে বেড়াচ্ছে এমন একজন নেতা, যিনি তাদের কথা বলবেন, তাদের পাশে দাঁড়াবেন, ক্ষমতার নয়—মানবতার রাজনীতি করবেন। আমি সেই মানবতার রাজনীতিতেই বিশ্বাস করি।”
মাঠের জনতার দিকে তাকিয়ে তিনি উচ্চারণ করলেন,- “আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ আপনারা—সাদুল্যাপুরবাসী। আমি যখন হাসপাতালের ওয়ার্ডে থাকি, যখন ক্লাসে পড়াই, কিংবা যখন রাজনীতির মাঠে আসি—আমি জানি, আমি আপনাদের দায়বদ্ধ মানুষ। আপনারা যদি আমার পাশে থাকেন, তাহলে এই অঞ্চল একদিন বাংলাদেশের উন্নয়নের আলো হয়ে উঠবে।”
তিনি সদস্য নবায়নের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন,
“এটি কেবল সদস্য সংগ্রহ নয়; এটি নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে যুক্ত করার উদ্যোগ। আমাদের তরুণরা এখন রাজনীতি থেকে বিমুখ—তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ তারুণ্য ছাড়া কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। বিএনপি তারুণ্যের দল, মুক্তচিন্তার দল, মানুষের দল।”
শেষে তিনি প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন,-“আমরা সবাই এক পতাকার নিচে, এক লক্ষ্য নিয়ে এগোবো—বাংলাদেশকে আবার মানুষের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য। কোনো বিভাজন নয়, কোনো অভিযোগ নয়—শুধু কাজ, ভালোবাসা ও ত্যাগ।”
তার ভাষণ শেষে মাঠজুড়ে এক বিরল আবেগ ছড়িয়ে পড়ে। কেউ হাত তুলে সমর্থনের প্রতীক দেখান, কেউ চোখ মুছেন নিঃশব্দে। যেন মানুষ বুঝতে পারল—একজন চিকিৎসক কেবল দেহ নয়, আত্মাকেও সুস্থ করতে পারেন; একজন রাজনীতিক কেবল নেতৃত্ব নয়, আশা জাগাতে পারেন।
অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিকের এই বক্তব্য কেবল একটি রাজনৈতিক ভাষণ নয়; এটি ছিল মানবিক রাজনীতির ঘোষণাপত্র। তার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো সেই চিরন্তন আহ্বান—মানুষের জন্য রাজনীতি, ভালোবাসার জন্য নেতৃত্ব।” সেই আহ্বান হয়তো একদিন সাদুল্যাপুরের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে, যেখানে রাজনীতি আবার ফিরে পাবে তার প্রকৃত অর্থ—সেবার নামই রাজনীতি।