মাদারীপুরে মামলার ফাঁদে নাজেহাল একাধিক পরিবার! পুলিশের টাকা নেওয়ার বিষয়টি সস্তা অভিযোগ
সাব্বির হোসাইন আজিজ, মাদারীপুরঃ মাদারীপুরের কালকিনিতে মিথ্যা মামলার ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে। মামলার সুবাদে তদন্তকারী কর্মকর্তা কৌশলে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে জেলা পুলিশ বলছে, পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সস্তা অভিযোগ। গনমাধ্যম কর্মিদের ঘটনার অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা লক্ষীপুর ইউনিয়নের ভাটবালী এলাকার শাজাহান সরদারের মেয়ে রেবা আক্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামের মানুষদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার কয়েক মাস আগে রেবার স্বামী কাজের সুবাদে সৌদি যান। শিপন সৌদি যাওয়ার সময় ইসমাইল হাওলাদার নামের এক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। কিছুদিন অতিবাহিত হলে ইসমাইল টাকা ফেরত চাইতে বাঁধে বিপত্তি। টাকা ফেরত না দিয়ে তাল-বাহানা শুরু করে শিপনের পরিবারের লোকজন। ইসমাইল নিরুপায় হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মাদবরের দারস্থ হয়ে শালিস বসান। স্থানীয় শালিসগন উভয় পক্ষের কথা শুনে আলোচনা সাপেক্ষে ৪০ হাজার টাকা ইসলামকে ফেরত দিবে শিপনের পরিবার, এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। শালিসির পরেও শিপনের স্ত্রী রেবা ও শশুর শাজাহান সরদার টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি শুরু করেন। শালিসির কিছুদিন পরে রেবার বাবা শাজাহান সরদার উপজেলার সুর্যমনি বাজারে আসলে স্থানীয় শালিসগন ইসমাইলকে টাকা কেন ফেরত দেওয়া হয়নি জানতে চান?। একপর্যায়ে শিপনের শশুর শাজাহান শালিসদের কাছে টাকা ফেরত দিতে ১০ দিন সময় চান, এবং বাড়ি চলে যায়। এঘটনার কয়েকদিন পরে শিপনের স্ত্রী রেবা বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ ইসমাইল হাওলাদার ও দুজন শালিস মিজান সরদার ও আক্তার সরদার নামে মানবপাচার আইনে মাদারীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সিআর মামলা নং ২৬৮/২০২৫। আদালত কালকিনি থানার মাধ্যমে সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে কালকিনি থানার মাধ্যমে মামলার তদন্ত পান খাসেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস আই সজিব কুমার মন্ডল বিপি নং ৯০১৯২২২৪৮৮। তদন্তভার পেয়েই মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। এসআই সজিব কুমার বিবাদী পক্ষকে অনেক ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে এসআই সজিব মিজান ও আক্তারকে ভয় দেখিয়ে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে মামলার ১নং বিবাদীকে ভয় দেখিয়ে, মামলার সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন কোটে পাঠানোর কথা ১৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এবিষয়ে প্রতিবেদকে ভুক্তভোগীরা তদন্তকারী কর্মকর্তার টাকা নিয়েছেন বলে একাধিক ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন। কিছুদিন আগেও এসআই সজিব কুমারের বিরুদ্ধে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সুত্রে দেখা যায়, গত ১৪/১০/২৫ ইং তারিখে এসআই সজিব কুমার মন্ডল সিআর মামলা নং ২৬৮/২০২৫ এর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এবং কালকিনি থানার ওসিও একই তারিখে স্বাক্ষর করেছেন। ১৫ অক্টোবর সদর সার্কল অফিসে জমা দেওয়া হয়। পরে সার্কল অফিসের মাধ্যমে ১৯ অক্টোবর পুলিশ সুপার স্বাক্ষর উক্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে ১মাস না যেতেই কিছুই মনে করতে পারছেন না? মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সজিব কুমার মন্ডল?। অন্যদিকে জেলার সচেতন মহলের বলছেন, এরকম মনভুলা অফিস দিয়ে সমাজের সঠিক তদন্ত সম্ভব না। যার দু’সপ্তাহের আগের কথা মনে থাকেনা। তাঁহাকে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা কতোটা সঠিক থাকবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এব্যাপারে মামলার বাদী রেবা জানান, ইসমাইল আমার স্বামী রিপন সরদারকে সৌদি পাঠায়। আমাদের সাথে তার যে কথা হয়েছিল তা সেই কথা রাখেনি। ৭/৮ মাস হয়েছে আমার স্বামী সৌদি গেছে, তাকে এখনো আকামা করে দেয় নাই। ইসমাইলের সাথে কথা ছিল ভালো বেতনে চাকরি দিবে, দিছে মরুভূমিতে আকামা না থাকার কারনে তারা বেতন দেয়না। ইসমাইল আকামা করে দিবে, এই শর্তে তাকে এলাকার লোকজন তাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে বলেছে। আমরা ৩০ টাকা দিতে চেয়েছি ইসমাইল তা রাখেনি। পরে আমার বাবা বাজারে গেলে লোকজন নিয়ে মারধর করে তার সাথে থাকা ৩০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি মানবপাচারকারী ইসমাইলের বিচার চাই।
একাধিক এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা জানান, ইসমাইল, আক্তার, মিজানের বিরুদ্ধে রেবা বাদী হয়ে আদালতে যে মানবপাচার মামলা দায়ের করেছে, তা সম্পুর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। শুধু ইসমাইলের ধারের টাকা না দেওয়ার জন্য ও হয়রানি করার উদ্দেশ্য এই মামলা দিয়েছে। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠানোর আবেদন জানাচ্ছি। শুনেছি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদীপক্ষের থেকে টাকা খেয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ন্যায় বিচারের জন্য পুনরায় সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে সিআর ২৬৮/২০২৫ মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সজিব কুমার মন্ডল মুঠোফোনে প্রতিবেদকে বলেন, এরকম কোন মামলায় আমি তদন্ত করেছি কি না, আমার মনে পরে না। আর টাকাও নেইনি।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম এন্ড অপস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি পুলিশের বিরুদ্ধে সস্তা অভিযোগ। এরকম বলতেই পারে। তবে ভিডিও বক্তব্য দেখান, টাকা নিয়ে থাকলে আমার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।





