সারাদেশ

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আরজ আলী পেলেন মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে যে ক’জন স্বাধিকার আন্দোলন থেকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দুর্গাপুর উপজেলার কৃতিসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরজ আলী। দেশ রক্ষায় এতোবড় ত্যাগের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী আরজ আলীর সম্মানে তাঁকে মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (মরণোত্তর পুরস্কার) প্রদান করা হয়। অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি নিয়ে সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি অধ্যাপক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরজ আলীর ভাতিজা মো. রফিকুল ইসলাম।
মাদার তেরেসা রিসার্চ সেন্টার বিশ্বজননী মাদার তেরেসার নামে ‘মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে। তেরেসা তাঁর জীবনকে মানবতার জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের পাশে থেকে আমাদের স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করেছেন। তাকে স্মরণীয় করে রাখা এবং সমাজে স্ব স্ব ক্ষেত্রে যাঁরা মানবতাকে উজ্জীবিত রেখে স্বমহিমায় অনন্য অবদান রেখেছেন তাদেরকে মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সম্মানিত করা হয়।
এরই ধারাবহিকতায় গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মাদার তেরেসার অবদান’’ শীর্ষক আলোচনা সভায়, সাবেক রাষ্ট্রদূত, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরজ আলীকে মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (মরণোত্তর পুরস্কার) প্রদান করেন। পরিবারের পক্ষে এই সম্মাননা গ্রহন করেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরজ আলীর ভাতিজা, ও সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম। এ সময় দেশ বরেন্য শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক সহ মাদার তেরেসা রিচার্স সেন্টারের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শহীদ অধ্যাপক আরজ আলী ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ এর নির্বাচন পর্যন্ত ছয় দফার আলোকে সুসঙ্গ দুর্গাপুরের জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতেন। এ কারণে ১৯৬৯র গণ অভ্যুত্থানে সুসঙ্গ দুর্গাপুরের ‘ছাত্র-জনতা সন্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ’ এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক সংগঠক ও পথ প্রদর্শক। বহু ছাত্র ও তরুণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। সর্বপ্রথম তিনি তাঁর বাড়িতে অবস্থানকারী আপন ভাগ্নে ওয়াজেদ আলী বিশ্বাস, লজিংয়ে থাকা মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুল জব্বার মুন্সী এবং পাশের গ্রামের ছাত্র মতীন্দ্রকে ভারতের বাঘমারায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিবন্ধন করান। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হবার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর ছাত্র ও ঘনিষ্ঠ তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ অব্যাহত রেখেছিলেন।
পরবর্তিতে স্বাধীনতার শত্রুরা ১৯৭১র আগস্টের ৯/১০ তারিখে তাঁর বাড়ি-ঘর লুটপাট করে এবং পুড়িয়ে দেয়। একাত্তরের ১৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা কলেজের শিক্ষক হোস্টেল থেকে তাঁকে আটক করে সুসঙ্গ দুর্গাপুরের বিরিশিরিস্থ সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর পাক সেনারা ১৬ আগস্ট তাঁকে হত্যা করে তাঁর মরদেহ সোমেশ^রী নদীতে ফেলে দেয়। স্বাধীনতা পরবর্তি এতো বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ আরজ আলীর স্মৃতি রক্ষায় তেমন কেন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনকে এগিয়ে আসার জোর দাবী জানিয়েছেন পরিবারের পক্ষ থেকে। সেইসাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাদার তেরেসা রিচার্স সেন্টারের প্রতি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,