পিঠে বড়শি গেঁথে চড়ক গাছের রশিতে বেঁধে শূন্যে ঘুরানো হলো ৭ সন্ন্যাসীকে। পুজা দেখতে হাজারো জনতার ঢল

ঝিনাইদহ থেকে মোঃ আজাদঃ
বড়শিতে গাথা জ্যান্ত তাজা মানুষ। চড়ক গাছে ঝুলিয়ে প্রায় ২৫/৩০ ফুট শুন্যে ঘুরাতে ঘুরাতে সন্ন্যাসীরা ছুড়ে দিচ্ছেন বাতাসা। এভাবেই একে একে ৭ সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শী বিধে শূন্যে ঘুরে পালন করলেন শিব পুজারই অংশ চড়ক উৎসব। গাঁ শিউরে উঠা এই দৃশ্য দেখলেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের বকুলতলায় প্রতি বছরের ন্যায় ৩শরা বৈশাখ বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে চড়ক উৎসব।
মহেশপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমের একটি গ্রাম ফতেপুরের বকুলতলা বাজার। হিন্দু ধর্মাবলীরা উৎসব আয়োজনে এ পুজা করে থাকেন। প্রতি বছর এই পুজার মুল আকর্ষন থাকে ৬/৭ জন সন্ন্যাসীর পিঠে বড়শিবিদ্ধ হয়ে শুন্যে ঘোরা। এবার ৭ জন সন্ন্যাসী বড়শি (বান) ফোড়ালেন ।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দুই শো’ বছর ধরে চলে আসছে এ চড়ক পুজা। আর এ পুজাকে ঘিরে বকুল তলা বাজারে ৩ দিন ধরে চলছে বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা। ফতেপুরের এ চড়ক মেলার মুল আকর্ষন বড়শিবিদ্ধ হয়ে শুণ্যে ঘোরানো (স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বান ফোড়ানো) এ দৃশ্য অবলোকনের সাথে সাথে মেলায় কেনা কাটা করতে সকাল থেকে হাজির হয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গনে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারন্য হয়ে যায় পুরো এলাকা জুড়ে। পুরো এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ। পড়ন্ত বিকালে ৭ সন্ন্যাসী অসীদ কর্মকার (মনা), মহাদেব হলদার,বিপ্লব কর্মকার,অধীর কুমার, বসুদেব,ভিম হলদার ও সাধন বাবু রায় ফতেপুর বাওড়ে স্নান করেন। এরপর ৭ সন্ন্যাসী মাটির কলসে জল (পানি) ভরে মাথায় নিয়ে আসেন মেলা প্রাঙ্গনে চড়ক গাছের গোড়ায়। প্রথমে অসীদ কর্মকার (মনা)’র পিঠে দুটি বড়শী বিদ্ধ করা হয়। এ সময় স্মরণ করা হয় মহাদেব শিব ঠাকুরকে। এরপর ১০/১৫ জন পুরুষ ধরাধরী করে ঝুলিয়ে দেন চড়ক গাছে বাধা রশিতে। গাছের অপর প্রান্তে থাকা কপিকলের বাঁশ জোরে জোরে ঘোরাতে থাকেন ২০/৩০ জন যুবক। চড়ক গাছে লটকে দেওয়ার সাথে সাথে কিছু মহিলা তাদের এক দেড় বছরের শিশু সন্তানকে তুলে দেন সন্ন্যাসীদের কোলে। তাকে নিয়েই শুন্যে ঘুরতে থাকে সন্ন্যাসীরা । এ অবস্থায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা। এভাবেই বড়শীতে বিধে ৪/৫ পাক শুণ্যে ঘুরে নেমে আসেন সন্যাসীরা।
সন্ন্যাসীরা জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছেন দু’শ বছর আগে এখানে চড়ক পুজা শুরু হয়। আগে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে এ পুজার আয়োজন করা হতো। সেই স্থানে সরকার আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তোলার কারনে এখন ফতেপুর বকুল তলার বাজারে চড়ক পুজা হয়। এ পুজাকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। লোকজ ঐতিহ্যের হরেক রকম পসরা সাজিয়ে দোকানীরা বেচাকেনা করেন ২ দিন ধরে। মিষ্টির দোকানীরা ১০/১২ রকমের মিষ্টি সাজিয়ে বিকিনিকি করছেন। তারা জানান প্রতি বারের মত এবারও মেলায় বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে।
পুজা ও মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী সাধন কুমার ঘোষ ও সাধারন সম্পাদক সুবল কুমার জানান, চড়ক পুজা মুলত শিব পুজারই অংশ বিশেষ। নানা আনুষ্ঠানিকতায় তা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ গোলাম হায়দার লান্টু জানিয়েছেন, এই উৎসব পালনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পরিষদের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য ও গ্রাম পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।