চিরিরবন্দরে ক্ষতিকর বালাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পোকা দমনে আলোক ফাঁদ।

এনামুল মবিন(সবুজ)
স্টাফ রিপোর্টার.
দিনাজপুর চিরিরবন্দরে রোপা আমন ফসল নির্বিঘ্নে উৎপাদনের লক্ষ্যে ক্ষতিকর বালাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পোকা দমনে সকল ব্লকে একযোগে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয়ের পরে কীটনাশক প্রয়োগ করতে কৃষকদের উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকের অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার কমবে এবং ফসল থাকবে বিষমুক্ত।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সকল ব্লকে রোপা আমন ধানের জমিতে পোকার উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকরা এসব আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রোপা আমন চাষের লক্ষ্য ধরা হয় ২৪ হাজার হেক্টর। মাঠ পর্যায়ে চাষ হয়েছে ২৩ হাজার ৬০৫ হেক্টর। রোপা আমন মৌসুমে সচেতনতার অভাবে অনেক কৃষক জমিতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে করে ফসলের জমির উপকারী অনেক পোকা মারা যায়। কৃষকেরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আলোর ফাঁদ দেখতে আসা কৃষক আমির আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না এখন থেকে ফসলের জমিতে কীটনাশক দেওয়ার আগে এভাবে দেখব জমিতে পোকা আছে কি না।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিনহাজুল হক নবাব বলেন, ‘রোপা আমনখেতে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে ক্ষতিকর পোকামাকড় চিহ্নিতকরণসহ পোকা দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমার ব্লকের বেশ কয়েকটি কৃষি জমিতে ইতোমধ্যে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিকর পোকা দমনে এ পদ্ধতিটি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।’
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, ‘মূলত আলোক ফাঁদ একটি পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম। এর মাধ্যমে জমিতে উপকারী ও ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি জানা যায়। ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্তের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায়। এতে কীটনাশকের ব্যবহার কিছুটা কমে আসে। ফলে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন ক্ষতিকর পোকা দমন হবে, অন্যদিকে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবেন।’
উল্লেখ্য, আলোর ফাঁদ ধানের পোকা দমনে একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। এটি তৈরিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব ও সৌরবিদ্যুতের সোলার প্যানেল বা চার্জার বাল্ব ব্যবহার করা হয়। ধানখেত থেকে ১০০ মিটার দূরে বাঁশ বা কাঠের খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ২-৩ ফুট ওপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে এর নিচে একটি পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রেখে ফাঁদটি তৈরি করা হয়। সন্ধ্যার পর এই ফাঁদের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন পোকামাকড় এসে পাত্রের পানিতে পড়ে মারা যায়। এভাবে ফসলের খেতে কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করা যায়। এ ছাড়াও উপকারী ও অপকারী পোকা শনাক্তকরণ সম্ভব হয় এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।