জলবায়ু পরিবর্তন ও হাওর লোকায়ত অভিযোজন বিষয়ক কর্মশালা

ডেস্ক রিপোর্ট : ভৌগোলিক কারণেই হাওরের মানুষ প্রাকৃতিক সকল দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে ঠিকে আছে যুগের পর যুগ। খরা, বন্যা, আগাম বন্যা, পাহাড়ী ঢল, আফাল, আফার,বজ্রপাত,গরম, ঠান্ডা, শৈতপ্রবাহ, ঘুণীঝড়, কৃষি উপকরনের চড়া দাম, ফসলের মুল্যকম, পোকার আক্রমন, বীজের সমস্যা, সেচের সমস্যা, অতিবৃষ্টিসহ নানান সংকট। জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে এই সংকট আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে কৃষকের কাছে। হাওরে বসতভীটার পরিমান অনেক কম। সেই অল্প জায়গায় বসবাস, প্রাণীসম্পদ পালন,কৃষিউপকরণ রাখা, বৈঠকঘর,রান্নাঘর মিলে সবকিছু সামাল দিয়ে বসতভীটায় সবজীচাষ করা হয়ে উঠেনা। সারাবছরই সবজী,মসল্লা,তেল কিনে আনতে হয়।
তারপরেও অনেক নারী পুরুষ আছেন যারা নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় সারাবছরই সবজীচাষকরার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হাঁসমোরগ,গরু ছাগল পালন করেন। বাড়িরসবটুকু জায়গাকেই ব্যবহার করেন কৃষিকাজে। বিভিন্ন লোকায়ত পদ্ধতি অনুসরণ করে অভিযোজন করে সচল রাখেন কৃষি ও জীবন ব্যবস্থা। এসব বিষয়কে সামনে রেখেই বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক দাতা সংস্থা অক্সফামের সহযোগিতায়“ জলবায়ু পরিবর্তন ও হাওর লোকায়ত অবিযোজন বিষয়ক” কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় গোবিন্দশ্রী ইনউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামের কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা দলের ১৫ জন কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নিম্নলিখিত সমস্যার কথা তুলে ধরেন ও সমাধানে কি কি লোকায়ত পদ্ধতি ব্যবহার করেন তা বর্ননা করেন এবং নিজ নিজ বাড়িতে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। যেসব সমস্যার তুলে ধরেন: আগাম বন্যা, ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি, স্থানীয় বীজ নেই, বর্ষাকালে সবজীর জন্য বাজার নির্ভরশীল ,চারণভূমি , ঘনকুয়াশায় ফসলের ক্ষতি, ঢেউয়ে বসতভীটায় ভাঙ্গন, ঠান্ডায় ফসলের ক্ষতি , ফসলের রোগবালাই বেশী , গরম ও তাপদাহে ফসলের ক্ষতি , হাওরে মাছ কমে গেছে, বসতভীটায় স্থান কম ,ফসলে পোকার আক্রশণ বেশী , বিষের অবাধ ব্যবহার ,সেচের পানির সংকট এসব সমস্যা মোকাবেলা করার লোক প্রযুক্তির কথা বর্ননা করেন। অনেক সময় ডোবা থেকে কলসি,বালতি দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করে। বিশেষ করে সবজী ক্ষেতে। ডোবায় পানি সংরক্ষণে রাখে এবং চৈত্র বৈশাখ মাসে সংরক্ষিত পানি থেকে সেচ প্রদান করে,রাসায়নিক সারের পরিবর্তে খুব অল্প পরিমানে গোবর সার,কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে,ফসলের রোগবালাইয়ের জন্য জৈববালাইনাশক তৈরী করে ব্যবহার করে অল্প পরিমান কৃষক, বসতভীটা রক্ষার জন্য বাড়ীর চারপাশে ভেন্নাগাছ, উজাওরি, মুর্তাগাছ, কুচুরিপানা, হিজলকরচ রোপন করে। নিজের বাড়িতে বীজ সংরক্ষণ করে অনেকেই (সবজীবীজ),বর্ষাকালে শাকসবজীর অভাব পূরণের জন্য বস্তাপদ্ধতি, টাওয়ার পদ্ধতি, ঘরের চাল ব্যবহার করে উৎপাদন করে,স্থানান্তর পদ্ধতিতে চারার বীজতলা তৈরী করেন। কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী সমন্বয়কারী শংকর ম্রং, আরো উপস্থিত বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান।