সরকারী অর্থ অপচয়রোধসহ অনুনোমদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন
মোঃ ইলিয়াস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভুঁইফোড় কিন্ডার গার্ডেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে সরকারী অর্থ অপচয়রোধসহ অনুনোমদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করণের নিমিত্তে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভুক্তভোগী অভিভাবকগণ।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চারণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী অভিভাবক হিসেবে মকবুল হোসেন বলেন, বালিয়াডাঙ্গীতে ভুঁইফোর কির্ডার গার্টেনের আদলে অনেক প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত যে বই বিতরণ করা হয় তাতেও ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোন না কোন এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করা হচ্ছে। এতে দেখা যায় যে ঐ শিক্ষার্থীদের নামে ওই সব প্রতিষ্ঠানেও বই সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবার ভুইফোর (কিন্ডার গার্টেনের আদলে প্রতিষ্ঠিত ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর পাঠদান প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠানেও বই দেওয়া হচ্ছে। এতে একজন শিক্ষার্থীর পিছনে ০২ সেট বই সরকারকে দিতে হচ্ছে। কিন্তু ০১ সেট বই কোন কাজে আসছে না। এতে সরকারকে অতিরিক্ত বই ছাপাতে হচ্ছে। অনুনোমোদিত তথা ভ‚ঁয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ বন্ধ হলে সরকার তথা রাজস্বখাত অর্থনৈতিক অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় অনুনোমোদিত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যা বিগত আওয়ামী সরকারের আওয়ামীলীগ মনোনীত লোকজনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে অনুমোদিত (এমপিও ভ‚ক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি থাকলেও ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের কোন অনুমতি নাই। তবুও দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান আওয়ামীলীগের লোকজনের ক্ষমতার দাপটে ও প্রভাবে চলছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি থাকলে আপত্তি নেই। তবে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে যেহেতু পাঠদানের অনুমতি নেই তাই এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা একান্ত আবশ্যক।
ভুক্তভোগী অভিভাবক আরও বলেন, ৮ম শ্রেণী কিংবা এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে একাধিক প্রতিষ্ঠান ফলাফল দাবী করে। যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে সে প্রতিষ্ঠানও ফলাফল দাবী করে আবার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানেও একই ফলাফল দাবী করে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। গড়ে উঠা মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের অনুনোমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত পক্ষে কোচিং সেন্টার হলেও বিদ্যালয়ের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শিক্ষা বার্ণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি বিহীন আর্থিক কিংবা সামাজিক জবাবদিহিতা না থাকায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালকগণ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী নেতৃবৃন্দের পৃষ্ট পোষকতায় ও কর্তব্যরত প্রশাসনিক সহযোগীতায় অবৈধ ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রচলিত বিধি বিধান উপেক্ষা করে টিউশন ফি সহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক হারে টাকা উত্তোলন করে সহযোগী ব্যক্তিদের সুবিধা দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ বিহীন পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করার মাধমে শিক্ষার গুনগত মান বিনষ্ট হচ্ছে। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্থা বা ট্রাষ্ট্রের নামে পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ সহ সরকারকে করফাঁকি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কোন প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের ন‚ন্যতম অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন মনে করছে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী অভিভাবক মকবুল হোসেন বলেন, বালিয়াডাঙ্গীতে ইজাব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে বালিয়াডাঙ্গী ল্যাবরেটরী স্কুল। তবে এটি কি আসলেই ট্রাষ্টের দ্বারা পরিচালিত নাকি এর ভেতর কোন কাহিনী আছে তা জানা যাচ্ছে না। যদি ট্রাষ্টের টাকায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে বেতন ফি, টিউশন ফি, সেশন ফি, মাসিক ফিসহ অনেক চার্জ কেন নেওয়া হচ্ছে? বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ইজাব গ্রুপকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি।
এসময় বালিয়াডাঙ্গী প্রেস ক্লাবের সভাপতি এনএম নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন জীবন, সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, দবিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ও অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।