সারাদেশ

হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার এক প্রাচীন লোকউৎসব

ফারিয়াজ ফাহিম
জামালপুর

গ্রামের আকাশে তখন শীতের হালকা ছোঁয়া। ধুলোবালির পথ ধরে সন্ধ্যার কুয়াশা নেমে আসছে ধীরে ধীরে। আজ বাংলা কার্তিক মাসের শেষ দিন—একসময় এই দিন মানেই ছিল মশাল জ্বালানোর উৎসব। পুরো গ্রাম জুড়ে ছুটাছুটি, হাসি-আনন্দ আর আগুনের লেলিহান শিখায় ভরা এক চঞ্চল সন্ধ্যা।

কালের স্রোতে, আধুনিকতার দাপটে সেই দৃশ্য এখন প্রায় বিলুপ্ত। তবুও কিছু কিছু গ্রামে এখনও শিশু-কিশোরেরা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে মশাল বানিয়ে, উৎসবের পুরোনো রেশটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করে। তাদের এই আনন্দ যেন এক টুকরো সময়কে ছুঁয়ে থাকে—যে সময়টি গ্রামীণ জীবনের সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্মৃতিগুলোর একটি।

ভোলার আগুন আর শৈশবের দৌড়-
শৈশবের কথা মনে পড়লে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অনন্য দৃশ্য। কার্তিকের ৩০ তারিখ সন্ধ্যা নামতেই সবাই মিলে বাঁশের মাথায় খড় বেঁধে বানানো হতো সেই ‘ভোলা’। তারপর সেই ভোলায় আগুন ধরিয়ে আমরা ছোটাছুটি করে যেতাম মাঠের ভেতর। আগুনের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠত মাঠ, গাছপালা, আর আমাদের উচ্ছ্বসিত মুখগুলো।

হৈ-চৈ করতে করতে একসুরে বলে উঠতাম—
“কার্তিক গেল, আগুন এলো!
অগ্রহায়ণ এলো, পুটি মাছ দোয়ারে পড়লো…!”

এ যেন ছিল গ্রামের নিজস্ব উৎসবধ্বনি।

উৎসবের পেছনের বিশ্বাস-
কেন এই উৎসব—তার নির্দিষ্ট ইতিহাস জানা না থাকলেও লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে এক বিশ্বাস। বলা হয়, মানুষের কল্যাণ, রোগ-ব্যাধি এবং অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতেই মশাল জ্বালানোর এই রীতি চালু হয়েছিল। আগুনকে শুভ শক্তি মনে করে গ্রাম্য মানুষ বছরের একটি অধ্যায়ের বিদায় আর নতুন অধ্যায়ের আগমনকে উদ্‌যাপন করত।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য-
আজ সবকিছুই বদলে গেছে। মোবাইল ফোন, টেলিভিশন আর আধুনিক বিনোদনে গ্রামীণ সংস্কৃতির অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। আগুন জ্বালানো, মশাল হাতে দৌড়ানো—এসব এখন অনেকের কাছেই অচেনা গল্প।

তবুও প্রতি গ্রামে যদি যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়, শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, তবে হয়তো আবার ফিরিয়ে আনা যাবে এই প্রাচীন লোকঐতিহ্যটিকে। এতে নতুন প্রজন্ম শুধু আনন্দই পাবে না, জানতেও শিখবে বাঙালির লোকসংস্কৃতির শিকড়ের কথা।

শেষ আলোর মতো টিকে থাকুক ঐতিহ্য-
কার্তিকের শেষ সন্ধ্যায় মশালের আগুন আজ আর আগের মতো জ্বলে না। কিন্তু স্মৃতি আর ঐতিহ্যের শিখা এখনও টিমটিম করে জ্বলছে আমাদের ভেতরে। এই ঔজ্জ্বল্যটুকু যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, তবে হারিয়ে যাওয়া উৎসবটি হয়তো আবার নতুন করে আলো ছড়াবে—গ্রামবাংলার আকাশজুড়ে।।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,