ছাত্রদল নেতা আবিদের স্লোগান নিয়ে ব্যাঙ্গাত্নক ভিডিও তৈরির প্রতিবাদে ইবিতে মানববন্ধন

ইবি প্রতিনিধি:
ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলামের উক্তিকে ব্যঙ্গ করে ভিডিও তৈরির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের একাংশ।
শনিবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় জড়িতদের হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে তাদের হাতে ‘আবু সাইদ-ওয়াসিমের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’, ‘জুলাই আগস্টের বিপ্লবী স্লোগান নিয়ে মককারীদের শাস্তি চাই’, ‘জুলাইয়ের অবমাননা মানি না, মানব না’, ‘বাকস্বাধীনতা চেয়েছি কিন্তু জুলাই অবমাননা চাইনি’ ইত্যাদি প্লাকার্ড দেখা যায়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, যে স্লোগান জুলাইয়ে আমাদের সাহস জুগিয়েছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে উৎসাহ দিয়েছিল, নির্ভীক হতে শিখিয়েছিল-সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই ঘটনার সাথে জড়িতরা সবাই চিহ্নিত শিবির কর্মী। তারা শাহ আজিজুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের বাসিন্দা। বিশেষ করে নাহিদ ইসলাম নাহিদ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আল-কোরআন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শিবিরের হল সভাপতি, তিনি এ ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। তাদের স্বেচ্ছাচারী মানসিকতা থেকেই এ ধরনের ভিডিও তৈরি ও ভাইরাল করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, ‘জুলাই কারো একার না। এখানে সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। আবিদ ভাইয়ের সেই স্লোগানের কারণেই কিন্তু সেদিন কেউ কাউকে আমরা ছেড়ে যাইনি। আর সে কারণেই আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি, আজ আমরা কথা বলতে পারতেছি, আর আপনারা মব করতে পারতেছেন, মিমস্ বানাতে পারতেছেন। প্লিজ জুলাইকে ভুলে যাইয়েন না। মজা নিবেন নেন, কিন্তু যেটা আপনারে স্বাধীনতা এনে দিল সেটা নিয়ে প্লিজ মজা নিবেন না। মনে রাখবেন জুলাই এর প্রশ্নে কিন্তু আমরা কাউকে ছাড় দিব না।’
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নাহিদুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলামের ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ ও ‘আপনাদের ভাই ছেড়ে যাওয়ার মানুষ না’ উক্তিকে ব্যাঙ্গাত্বকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ওমর ফারুক (ইইই ২০-২১ সেশন), নাহিদ হাসান (আল কুরআন ২০-২১), নাইমুর রহমান (অর্থনীতি ২১-২২), সোহান (ল ১৭-১৮), রোকনুজ্জামান রোকন (মার্কেটিং ১৯-২০), মোজাম্মেল (দাওয়াহ ২১-২২), আবদুল্লাহ নুর মিনহাজ (আল হাদিস ২০-২১)। তারা সবাই ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মীর বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত শিবির কর্মীদের দাবি, মূল ভিডিওটি ২৭ সেকেন্ডের ছিল। যেখানে তুমিও জানো, আমিও জানি, সাদিক কাইয়ুম পাকিস্তানি” স্লোগানও ছিলো। কিন্তু কাটছাঁট করে ১২ সেকেন্ড প্রচার করা হয়েছে।
তাদের দাবি, ডাকসু নির্বাচনের সময় একটি ভিডিওতে এক ছাত্রীকে আবিদুলকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, “ভাইয়া হারেন-জিতেন ছেড়ে যাইয়েন না, প্লিজ।” জবাবে আবিদুল বলেন, “তোমার ভাই ছেড়ে যাওয়ার লোক না।” মূলত এরকম ভিডিওগুলো দেখেই আমরা এই ভিডিও বানিয়েছি। ওই ভিডিওতে আবিদুল ইসলামের জুলাই-সংশ্লিষ্ট স্লোগান ব্যঙ্গ করা হয়নি: বরং ডাকসু নির্বাচনের সময় তার প্রচারণার বিভিন্ন উক্তিকে সমালোচনা করা হয়েছে।
তারা বলেন, মজার ছলে করা আমাদের এই ভিডিওটি এভাবে মানুষকে কষ্ট দেবে, বিশেষ করে আমাদের জুলাই সহযোদ্ধাদের, এটি কখনোই ভাবতে পারিনি। আবিদ ভাইসহ যারা আমাদের এই কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়েছেন সবার কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আবিদ ও সাদিক ভাইসহ সকলের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।
এদিকে এ বিষয় নিয়ে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও মাসুদ রুমী মিথুনের পক্ষে এ অভিযোগ দেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ।
উল্লেখ্য,গতকাল শুক্রবার রাতে ১২ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওটির খণ্ডাংশ দেখে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ অনলাইন অ্যাক্টভিস্টরা প্রতিবাদ জানান।