তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ মানিকগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস

আসাদ মানিকগঞ্জ থেকে

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি। জেলার পাশাপাশি উপজেলায় তেমনভাবে গড়ে উঠেনি শিল্প কারখানা। ঢাকা জেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা সাটুরিয়ায় অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তেমনভাবে অগ্রগতি হয়নি। ঢাকা আরিচা মহাসড়কের নয়া ডিঙ্গি নামক স্থানে ২০০৭ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ নামে একটি গার্মেন্টস। ১ হাজার শ্রমিক ৪ বিঘা জমির মধ্যে ছোট্ট পরিসরে শুরু করে বর্তমানে পরিধি বেড়ে ২৬ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৯ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি কলেবর বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানা যায়, বিটপি গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ। এ প্রতিষ্ঠানে প্যান্ট তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলী রেজা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সহিত ছোট্ট একটি কারখানা থেকে মানিকগঞ্জের বৃহৎ পোশাক কারখানায় পরিণত করেছেন। দৃষ্টান্ত রেখেছেন সাটুরিয়া উপজেলায় পোশাক কারখানা স্থাপন করে উন্নতি করা সম্ভব। ২০২৩ সালে আলী রেজার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মীরান আলী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

দীর্ঘদিন যাবৎ পোশাক কারখানার উপর যে দুর্গতি, ধস, ধ্বংসের চিত্র চলছে সারাদেশে তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ এর ব্যতিক্রম। এর অন্যতম কারণ মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। এত দিনের প্রতিষ্ঠানটিতে বড় কোন শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। মজুরি বকেয়া বা না দেয়ার ঘটেনি। এ কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিক সাটুরিয়া তথা আশে পাশের উপজেলার। এখানে চাকুরী করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলিয়েছেন। শ্রমিকদের পরিবহনে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যানবাহন মালিকদের একটি আলাদা ব্যবসা গড়ে উঠেছে। দেড় থেকে দুই শত যানবাহন শ্রমিক পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় প্রতিদিন। অসংখ্য পরিবহন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আশেপাশে দোকান পাট সহ ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একসময় এ এলাকায় বিকেল‌ হলেই লোকজন থাকত না, সন্ধ্যার আগেই ভুতুড়ে জায়গায় পরিনত হত। এখন প্রায় সারা রাত চলে লোক সমাগম।

তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ এর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, শ্রম আইনের সমস্ত সুযোগ সুবিধা, ওভারটাইম, প্রডাকশন ইনসেনটিভ, উৎপাদন ভাতা, ল্যান্স এল্যাউন্স সহ উৎসব ভাতা, যাতায়াত বিল, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ বিদ্যমান।

এখানে রয়েছে উন্নত মানের ভবন, ভবনের ছাদে জরুরী হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য হ্যালিপ্যাড, অগ্নি নির্বাপন, আগুন লাগার পর এক্সিট রাস্তার চমৎকার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশাল ইটিবি প্ল্যান্টেশন। যাহা পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষার কারখানা আশেপাশে তথা সমগ্র উপজেলার।

তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ এর শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি সালমা বেগম জানায়, এখানে কাজ করে তারা সুখেই আছেন। বাড়ীর ভাত খেয়ে বেতন পাচ্ছেন।  নিয়মিত বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। তাদের কোন অসন্তোষ নেই।

দোকানদার হারুন বলেন শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য অবস্থান করা গাড়ীগুলো মহা সড়কের দুই পাশে অবস্থান করার কারণে প্রায়স দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। শ্রমিক সহ অনেক যাত্রী প্রাণ হারিয়েছে এ পর্যন্ত। মহাসড়কের দুই পাশে গাড়ী অবস্থান না করার দাবি জানায় হারুন‌ সহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী।

এর দায় নিতে চায় নি তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ এর কর্তৃপক্ষ।‌

তারা সীমা এ্যাপারেলস্ লিঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সাটুরিয়া উপজেলার অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।