দলীয় প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করছেন যুবদল নেতা সুমন
মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
এলাকায় লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, খাল দখল, জমি দখল, গরু চুরি, নারী কেলেঙ্কারি সহ অসংখ্য দুর্নীতি সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন সহ বেপরোয়া চাঁদা বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের জিয়াউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে।
জানা যায় তার পিতা ওবায়দুল্ল্যাহ দুনু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যান থাকা কালে একেকবার একেক নেতার অনুসারী হয়েছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে নিজ দল বিএনপির বিপরিতে মঈন-ইউ -আমেদ এর ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদের নির্বাচন করে দল থেকে বহিস্কৃত হন। ছেলে মুরাদ জিয়াউর রহমান সুমনও সব সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেন। জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল আলম মঞ্জু ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেই সুবাদে তার দরপত্রের কাজ সাব কন্টাক্ট এ ভাগা-ভাগি করে করতেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও নিয়মিত ভিজিএফ কার্ড নিতেন। শুধু তাই নয় নৌকার প্রার্থী সেলিমকে জয়ী করতে অনুসারীদের দিয়ে ভোট কারচুপিও করেছেন।
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী হোটেল ব্যবসার সুবাদে সেখানেই সময় দিতেন। বিএনপির কোন সহযোগী গংগঠন বা ছাত্র দলের কোন কমিটিতে না থাকলেও হঠাৎ করেই ২০১৮ সালে মঞ্জুরুল আজিম সুমন ( জিএস সুমন) এবং নুরুল আমীন খানের নেতৃত্বে গঠিত জেলা যুবদলের কমিটিতে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। দলীয় কোন কাজে সক্রিয় না থাকলেও ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নিজ এলাকা রাজ গঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন জিয়াউর রহমান সুমন।
গত ৫ আগস্ট স্থানীয় হিন্দু শিক্ষিকার বাড়ি ঘর তার নেতৃত্বে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বাড়ির সব আসবাব পত্র ভাঙচুর করা হয়। এতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানান শিক্ষিকা। এছাড়া চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সে নিয়মিত টিসিবি এবং ভিজিএফের কার্ড সহ নানা সুবিধা নিতেন সেই চেয়ারম্যানের কার্যালয়ও ভাংচুর করেন, একই দিনেই স্থানীয় আলীর দোকান, বেচার পোলাগো বাড়ি, পারভেজের বাড়ী ও সোলায়মান ট্রেডার্স তারা ভাংচুর করেন। ৬ আগস্ট রাতে রাজগঞ্জের মদিনা বাজারে কৃষ্ণের দোকানসহ প্রায় ৬টি দোকানে অগ্নি-সংযোগের ঘটনাও একই সূত্রে গাঁথা জিয়াউর রহমান সুমনের নেতৃত্বে হয় বলে এলাকাবাসী জানান।
সুমনের সন্ত্রাসী গ্রুপ সিএনজি স্টেশন দখল, চাঁদাবাজি, মোটরসাইকেল ছিনতায়সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ইজারা নেয়া ব্যাক্তিকে টাকা না দিতেও রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের হুমকী ধামকী দেয় সুমনের সন্ত্রাসী দল। সম্প্রতি আলাদিনগর সরকারী প্রাইমারী স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক সংখ্যালঘু জিন্নু মাস্টারের কাছে চাঁদা দাবী করে সুমনের সহযোগী বাকী পুরের জাফর। শ্রীধরপুর গ্রামের কিরনের কাছ থেকেও চাঁদা হিসেবে ১৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। সুমনের আরেক সহযোগী আজাদ মনপুরা গ্রামের পারভেজের মটরসাইকেল বিক্রি করে দেয় অন্যের কাছে। বাকীপুরের মোশাররফের মাছের প্রজেক্ট দখল করে নেয় সুমনের লোকরা। এর আগে মোশাররফের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে তারা।
রাজগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক এবং কমিটির সদস্যদের হুমকী-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন তার অনুসারিরা। সুমনকে স্কুলের সভাপতি না করলে লঙ্কা কান্ড ঘটে যাবে বলেও তারা হুমকী দেন তারা।
জানা যায়, জিয়াউর রহমান সুমনের নেতৃত্বে বাকীপুরের মোশাররফের প্রজেক্ট দখল, ৫ আগস্ট চন্দন এর মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়, কিরন থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা নেয়, পারভেজের মোটরসাইকেল চুরি, সুমন এর অনুসারী জাফর স্থানীয় জিন্নু মাস্টার থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতা ফয়সাল ইনাম কমল বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না, কারন সে আমার প্রতিপক্ষ তাই এখানে কোন মন্তব্য দিলে সেটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে সে আখ্যায়িত করবে। তিনি আরো বলেন সে যদি কোন অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে সেটা যুবদলের জেলার দায়িত্বে আছেন তারা বিষয়টা বিবেচনা করবেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতা কামাল বলেন, আমি এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না। সে যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে দলীয় উধ্বতন নেতারা সঠিক তদন্ত করবেন।
নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসে নি, ভুক্তভোগীরা যদি লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
নোয়াখালী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন খান বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ চাই, শুধু সুমন নয় যারা দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অনিয়ম চাঁদাবাজি অনিয়ম অপকর্মে লিপ্ত হবে তাদের সবার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিব। দল মধ্যে এমন লোকদের জন্য আসে নি। আমরা সব সময় সুন্দর ও সুশৃংখল দল গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।