দেশের প্রথম ডিজিটাল পল্লী বা ডিজিটাল ভিলেজ ঘোষণা শুভঙ্করের ফাঁকি!

আসাদ মানিকগঞ্জ থেকে
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চারটি গ্রামের তাঁত পল্লীকে দেশের প্রথম ডিজিটাল পল্লী বা ডিজিটাল কমার্স ভিলেজ ঘোষণা করে পতিত সরকারের বানিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে বৈশ্বিক সংশ্লিষ্টতাকে আরো দৃঢ় করতে এই গ্রামটিকে মডেল হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে ই-ক্যাব।
জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালায়ের যুগ্ম সচিব ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) সমন্বয়ক মো. আবদুর রহিম খান, ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কিছু তাঁত ব্যবসায়ীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক সেমিনার করে সাটুরিয়ার সাভার, আগ-সাভার, হামজা ও জালশুকা গ্রামের তাঁতীদের নিয়ে গঠিত দেশের প্রথম ডিজিটাল পল্লী ঘোষণা করা হয়। ডিজিটাল পল্লীতে থাকবে ইন্টারনেট, লজিস্টিক, ডিজিটাল পেমেন্ট, দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন কর্মসংস্থান, ক্রসবর্ডার ইকোসিস্টেম তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ে তৈরি করা হবে এই মডেল ভিলেজ।
বিগত সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ২০২২ সনের আগস্টে ডিজিটাল পল্লী পরিদর্শন করে বলেন, দ্রুততম সময়ে ওই এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ এবং ওয়াইফাই এর মাধ্যমে কমিউনিটি নেটওয়ার্কিং এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। গ্রামেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিয়ে পল্লী গ্রামের ঐতিহ্য, বিশেষ করে বাংলার তাঁত শিল্পীদেরকে অ্যামাজনের মতো মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে, একটি টেকসই ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন আমরা এমন একটা ডিজিটাল ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে চাই যার মাধ্যমে এই গ্রামে বসেই কৃষক বা প্রান্তিক খামারি ও কারু শিল্পীরা অ্যামাজনে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে। মন্ত্রী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে একটি প্রকল্প জমা দেয়ার পরামর্শ দেন। এভাবেই একে একে দেশের প্রতিটি গ্রামই ডিজিটাল পল্লীতে রূপান্তরিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সবই ছিল ফাঁকা বুলি।
সরজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করে দেখা যায়, ডিজিটাল পল্লী, ‘গ্রাম থেকে বিশ্বে’ মডেল ভিলেজ আরও কত কি নামের কোন ছিটে ফোঁটাও নেই এ চারটি গ্রামে। কয়েকজন তাঁতীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা, মানিকগঞ্জ থেকে লোকজন এসে কথার ফুলঝুরি দিয়ে আমাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে সভা, আলোচনা নানা আশ্বাস দিয়েছে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। ডিজিটাল ফিজিটাল আমরা কিছুই বুঝিনা। আমরা আগে যা ছিলাম তেমনি আছি। মন্ত্রী পরিদর্শনের সময় শুধু ভাল ভাল কথা, উন্নতির কথা শিখিয়ে দিয়েছিল তাই বলেছি। আর মন্ত্রী সাহেব অনেক আশ্বাস দিয়ে গেছেন আমাদের দুই পয়সার উপকার হয় নি। তখন মাঝে মধ্যে সাংবাদিকরা এসে ছবি তুলে ভিডিও করতো আমাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটাতো।
সাভার গ্রামের প্রতিষ্ঠিত এন ডি কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ আজাহার আলী কালের কণ্ঠ কে জানান, এসব ডিজিটাল পল্লী টল্লী একটা শ্রেনীর উন্নতির জন্য। পরিবর্তন হয় না তাঁতীদের। এখানে মহাজন শ্রেণীর শাড়ি ব্যবসায়ীদের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও সাধারণ তাঁতীরা দিন আনে দিন খায়। অধিকাংশ তাঁতীদের বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়। তাই এ শিল্পকে বাঁচাতে এসব ডিজিটাল ফিজিটাল বাদ দিয়ে তাঁতীদের পাশে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
আসলেই দেশের প্রথম “ডিজিটাল পল্লী” ঘোষণাই একটা শুভঙ্করের ফাঁকি!