নাহাট স্থলবন্দরে এক দশকেও বাড়েনি আমদানি-রপ্তানি

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ঃ
ইমিগ্রেশনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ অংশ
১০ বছরেও বন্দরে চালু হয়নি ইমিগ্রেশন
বর্তমানে আমদানি হচ্ছে পাথর আর কয়লা
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের আসাম। আর ভুটানের দূরত্ব মাত্র ১৫০ কিলোমিটার। সম্ভাবনাময়ী এই স্থলবন্দরে সংক্ষিপ্তভাবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তবে গেল এক দশকের বেশি সময়ে এই বন্দরে বাড়েনি আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ।
চালু হয়নি ইমিগ্রেশন (যাত্রী পারাপার) ব্যবস্থাপনা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন সঠিক পরিকল্পনা নিলে এই বন্দর হতে পারত তিন দেশের ব্যাবসায়িক জোন। আর ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা চালু করলে ভুটান ও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় দূরত্ব কমবে কয়েক শ কিলোমিটার। তবে বর্তমানে ইমিগ্রেশন চালুর জন্য বাংলাদেশ অংশ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্র বলছে, স্থলবন্দর চুক্তিতে ভারত থেকে চাল, ডাল, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, তাজা ফল, কয়লা, পাথরসহ ১০টি পণ্য আমদানির কথা থাকলেও ভারত থেকে শুধু পাথর ও কয়লা আমদানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশ থেকে ১০টি পণ্য রপ্তানি হলেও নামমাত্র রপ্তানি হচ্ছে প্লাস্টিক, ঝুট ও শীতকালীন পোশাক।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাথমিকভাবে ভারতের আসাম, মেঘালয়সহ সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সোনাহাট স্থলবন্দর চালু করা হয়। ওই সময়ে সোনাহাট স্থলবন্দরটি চালু হলেও ২০১৬ সালে ১৪.৬৮ একর জমির ওপর বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়।
শুরু থেকেই স্থলবন্দরটি রাজস্ব আয়ের বিপুল সম্ভাবনাময় একটি বন্দর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও শুধু ইমিগ্রেশন চালু না থাকায় আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে না। দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের আসাম, মেঘালয় ও সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সব রাজ্য ছাড়াও ভুটানের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে এই স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি বলে মনে করেন স্থানীয়রা। ইমিগ্রেশন না থাকায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বর্তমান যাতায়াত করতে হচ্ছে লালমনিরহাট বুড়িমারী চেকপোস্ট দিয়ে।
এতে পাড়ি দিতে হচ্ছে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার পথ। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি অপচয় হচ্ছে অর্থ ও সময়। তারা বলছেন, ইমিগ্রেশন চালু হলে ব্যাবসায়িক সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি পর্যটন, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতেও বেশ গুরুত্ব বহন করবে এই স্থলবন্দর। তাই শিগগিরই এই বন্দরে ইমিগ্রেশন চালুর দাবি জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে এই বন্দরে ৬০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ওয়্যারহাউস, ৯৬ হাজার বর্গফুটের পার্কিং ইয়ার্ড, ৯৫ হাজার বর্গফুটের ওপেন স্টকইয়ার্ড, শ্রমিকদের জন্য দুটি বিশ্রামাগার, একটি প্রশাসনিক ভবন ও দ্বিতল ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু কয়লা ও পাথর আমদানি এবং হাতেগোনা কয়েকটি পণ্য রপ্তানি করা হয়। এতেই বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।
সরেজমিনে সম্প্রতি বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকালবেলায়ই বন্দরে ঢুকতে শুরু করেছে পাথরভর্তি ভারতীয় পাথরের ট্রাক আর কিছু কয়লা। এই বন্দরে পাথর কিনতে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের পাথর ব্যবসায়ী মো. মাসুম বিল্লাহ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি প্রায় সাত বছরে ধরে পাথরের ব্যবসা করি। এই এলাকার পাথরের মান ভালো। ঢাকা থেকে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। বড় সমস্যা ইমিগ্রেশন না থাকায় আমরা ওপারে যেতে পারছি না। আমরা চাই দ্রুত ইমিগ্রেশন চালু হোক। এতে আমাদের সময় ও খরচ উভয়ই বাঁচবে।’
বন্দরের পাথর ব্যবসায়ী আবেদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খালি শুনি ইমিগ্রেশন চালু হয় হয়, কিন্তু আর হয় না।’
বন্দরের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতীয় প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে এলসি করেও কয়লা ও পাথরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। অন্যদিকে ইমিগ্রেশন না থাকায় ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করতে হয়।’
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সীমান্ত স্টেশন (ইমিগ্রেশন) তৈরিতে দুই দেশের সম্মতি লাগে। বর্তমানে ইমিগ্রেশন চালুর জন্য বাংলাদেশ অংশ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে।
সোনাহাট স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. আতিকুল ইসলাম কলের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইমিগ্রেশনের জন্য বাংলাদেশ অংশ প্রস্তত রয়েছে। আশা করি, দুই দেশের সম্মতিতে খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা চালু হবে।’