শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিওর মালিক, ম্যানেজারসহ আটক ৭

পিরোজপুর প্রতিনিধি:

পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার আরামকাঠি ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির মালিক ও পরিচালক মো. রহমতউল্লাহ প্রায় চার হাজার সঞ্চয়ী সদস্যের শত কোটির বেশি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে সঞ্চয় জমা দেওয়া কয়েকশ সদস্য রহমত উল্লাহর আরামকাঠি গ্রামের বাড়িতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ।

এ সময় ওই সমিতির ম্যানেজারসহ কর্মরত সাত কর্মীকে আটক করেন সদস্যরা। পরে পুলিশ গিয়ে কর্মচারীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

এদিকে রবিবার সকালে রহমত উল্লাহর পূর্ব জলাবাড়ী গ্রামের একটি গরুর খামারে লুটপাট করে ওই সমিতিতে আমানত দাবিদার কিছু লোক।

এসময় নিলুফা নামে বিক্ষুব্ধ এক নারী আমানতকারী অভিযোগ করেন, তিনি রহমত উল্লার সমিতিতে এককালীন ১৪ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। গত কয়েক মাস যাবত টাকা ফেরত চাচ্ছিলেন। শনিবার বিকালে জানতে পারেন রহমত উল্লাহ তার পরিবার নিয়ে পালিয়েছেন।

রওশন আরা নামে এক দিনমজুর নারী অভিযোগ করেন, তিনি রাস্তায় চানাচুর,ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। তিনি রহমতের  সমিতিতে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ পাওয়ার আশায় এককালীন ২ লাখ এবং প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখতেন। সব মিলিয়ে তার আট লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

রিনা বেগম নামে অপর এক নারী অভিযোগ করেন, তিনি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা এককালীন আমানত হিসেবে  রেখেছিলেন। তিনি পাঁচ বছরে দ্বিগুণ লাভের আশায় টাকা জমা রাখেন।

এভাবে চার হাজার সদস্য গত কয়েক বছর ধরে ওই সমিতিতে কোটি কোটি টাকা জমা রাখেন।

আরামকাঠি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির ম্যানেজার বেল্লাল মিয়া বলেন, তাদের কিছু না জানিয়ে ওই এনজিওর মালিক রহমত উল্লাহ পরিবার নিয়ে চার দিন আগে ঢাকায় গেছেন। সেই থেকে রহমতের সঙ্গে তারা কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন গ্রাহকরা  এই সমিতিতে কর্মরতদের আটকে রেখেছেন।

অপরদিকে রহমত উল্লাহ লাপাত্তা হয়েছে এই খবর শুনে পূর্বজলাবাড়ী গ্রামে তার প্রজেক্টে শতাধিক লোক লুটপাট করেছেন।

এসময় কেউ গরুর ফার্মের টিন নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বাগান থেকে বস্তা ভরে আম নিচ্ছেন। কেউ টিউবওয়েল, ফার্নিচার, ধানভাঙার মেশিন ও নারিকেল নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় বিটুল নামে একজন বলেন, আমি এই সমিতিতে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা রেখেছি। ওই সমিতির মালিক রহমতুল্লাহর প্রজেক্ট থেকে যে যার মত বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন।

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, রহমতুল্লাহর সঞ্চয় সমিতির লাইসেন্স বরিশাল বিভাগীয় অফিস থেকে করেছে। পরিচালকসহ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।

নেছারবাদ (স্বরূপকাঠি) থানার ওসি মো. বনি আমীন জানান, বিষয়টি শুনে রাতেই পুলিশ পাঠিয়ে সমিতির ম্যানেজারসহ মোট সাতজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। রহমতুল্লাহ সহ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।