কুষ্টিয়ায় কোভিড আতঙ্ক: চুরি হয়েছে জেলার একমাত্র করোনা ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ

শুভ ইসলাম সম্রাট, স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ায় ফের ছড়িয়ে পড়ছে কোভিড আতঙ্ক। রাজধানী ঢাকা থেকে আগত দুজন কোভিড পজিটিভ রোগী সম্প্রতি ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাশাপাশি জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ নানা উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ঘরে মানুষ ভুগছেন। এসব উপসর্গ নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসকরা সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—জেলার একমাত্র করোনা পরীক্ষা ল্যাব থেকে সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত পিসিআর ল্যাবটি থেকে ধাপে ধাপে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। মাস খানেক আগে বিষয়টি টের পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, চুরির ঘটনাটি গত চার মাস ধরে ঘটলেও বিষয়টি জানাজানি হয় মাত্র এক মাস আগে। এরইমধ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয় একমাত্র পিসিআর ল্যাব। একতলা ওই ভবনে স্থাপিত ল্যাবটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর গত এক বছর ধরে ল্যাবটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। বিভাগটির অধীনস্থ দুজন কর্মচারীকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। চুরির ঘটনা জানার পর তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, যা ইতোমধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম জানান, “ধারণা করছি গত চার মাস ধরে ধাপে ধাপে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আমরা এক মাস আগে বিষয়টি বুঝতে পারি। তদন্তে দেখা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চরম অবহেলার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।”
তিনি আরও জানান, “করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের শেষ থেকে দেশে কোভিড বিস্তার শুরু হলেও কুষ্টিয়ায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত জেলায় কোভিডে মারা যান ৮৫৫ জন। মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় চার হাজার।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়—৩৪২ জন। পরবর্তী মাস থেকে মৃত্যুহার কমতে থাকে। বেশিরভাগ রোগী শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সংকটে হাসপাতালে মারা যান।
বর্তমানে আবারও বাড়ছে কোভিডের আশঙ্কা। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষ জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নার্সরা তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিচ্ছেন।
মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ না হলেও আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত আছে। ঢাকা থেকে আসা কোভিড পজিটিভ দুজন রোগীকে ভর্তি হওয়ার জন্য বলা হলেও তারা চিকিৎসা না নিয়েই চলে গেছেন। এমন অবহেলার কারণে রোগ ছড়িয়ে মহামারির রূপ নিতে পারে। তিনি সকলকে সামান্য উপসর্গ থাকলেও সচেতন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।