ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে চাকুরী ছেড়েছেন সাবেক এমপি’র শ্যলক জামিনদাতা দুই শিক্ষকের বেতন বন্ধ

ঝিনাইদহ থেকে মোঃ আজাদঃ
মহেশপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে চাকুরী করতেন ঝিনাইদহ -৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল এর শ্যলক কামরুজ্জামান সাচ্চু। চাকুরী করাকালে ভগ্নিপতির প্রভাব খাটিয়ে রুপালী ব্যাংক খালিশপুর শাখা থেকে কনজুমার ঋন করিয়ে নেন ১৫ লাখ টাকা। এমনকি তারই দুই সহকর্মী স্বাক্ষর না দিলেও তাদের নাম ও স্বাক্ষর করা কাগজ জমা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্যের শ্যলক ।
এদিকে ৫আগষ্টের পর ওই শিক্ষক এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে অক্টোবর মাসে ডাকযোগে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে সেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে দেন। চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি আর ঋনের কিস্তি পরিশোধ করেননি। আর টাকা না পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিনদার হিসেবে নাম থাকা ওই দুই শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ও শারমিন আক্তারের বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন। গত দুই মাস তারা বেতন পাননি। এমনকি এবারের ঈদের বোনাসটিও তারা উঠাতে পারেননি। আর বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন পার করছেন দুই শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, সেচ্ছায় চাকুরী ছাড়া ওই শিক্ষক কামরুজ্জামান সাচ্চু ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কারিগরি শাখার সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করতেন। তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ের মহেশপুর-কোটচাদপুর আসনের সংসদ সদস্যের শ্যালক হওয়ায় ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতেন না। মাঝেমধ্যে এসে খাতায় স্মারক করে চলে যেতেন। ১৫ বছরে তিনি এক প্রকার ক্লাস না করেই বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। শিক্ষকরা জানান, সর্বশেষ ২০২২সালে কামরুজ্জামান সাচ্চু রুপালী ব্যাংক হাট খালিশপুর শাখা থেকে ১৫লাখ টাকা কনজুমার ঋণ নেন। ঋন নেওয়ার সময় তারই প্রতিষ্ঠানের দুইজন শিক্ষকের জামিন দাতা হিসেবে নাম দেন। সেখানে তাদের স্মাক্ষরও করা রয়েছে।
অবশ্য শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি কোনো ঋনপত্রে কখনও স্বাক্ষর করেননি। এটা ঋন গ্রহিতা নিজেই জালিয়াতি করে করেছেন। তিনি আরো বলেন, গত ৫আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে শিক্ষক কামরুজ্জামান সাচ্চুকে এলাকায় দেখা যায় না। তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সেচ্ছায় তিনি চাকরী থেকে অব্যহতি নেন। স্ব-শরীরে না এসে ডাকযোগে তিনি পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন।
আরিফুল জানান, চাকরী থেকে অব্যহতি নিলেও তার ঋণ থেকে যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে যোগাযোগ করেও তাকে পাননি। প্রথম দিকে তিনি ঋন এর কিস্তি দিলেও গত ৫মাস দেন না। যার ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিন দাতার ঘরে তাদের দুই শিক্ষকের নাম থাকায় তাদের বেতন আটকে দিয়েছেন। তারা ব্যাংকে যোগাযোগ করলে কতৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন ঋন গ্রহিতাকে না পাওয়া গেলে ঋনের টাকা জামিন দাতার নিকট থেকে নেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই এই টাকা তাদেরকেই দিতে হবে।
শিক্ষক নাসরিন আক্তার জানান, তাদের সহকর্মী কামরুজ্জামান সাচ্চু ব্যাংক ঋণ নিতে তাদের স্বাক্ষর জাল ও ছবি আর জাতীয় পরিচয়পত্র চুরি করে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই সময় স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে জামিনদারকে ব্যাংকে হাজির করেননি। কারলে আজকের এই পরিবেশ হতো না। তারা ওই কাগজে স্বাক্ষর না করেও এখন বেতন পাচ্ছেন না। তারা স্বাক্ষর জাল করে ঋন নেওয়ার বিষয়ে হাট খালিশপুর রুপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বরাবর পৃথক লিখিত আবেদন করেছেন। তারপরও কর্তৃপক্ষ তাদের বেতনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে জানান, বিষয়টির একটা সমাধান হয়েছে বলে শুনেছেন। এর বেশি তিনি বলতে চাননি।
শিক্ষক কামরুজ্জামান সাচ্চু এলাকায় না থাকা ও তার পূর্বের মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিপদগ্রস্ত শিক্ষকদ্বয় জানান তিনি পলাতক থাকায় কোনো ভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে রুপালী ব্যাংক হাট খালিশপুর শাখার ব্যবস্থাক মোহাম্মদ তুহিন আলী জানান, ঋণ গ্রহিতা শিক্ষক কামরুজ্জামান চাকরী ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেননি। নিয়মানুযায়ি জামিনদার এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন। যে কারনে তাদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন বেতনের জন্য ওই দুই শিক্ষক এসেছিলেন। তাদের দাবি তারা শিক্ষক কামরুজ্জামান সাচ্চুর ঋণপত্রে স্বাক্ষর করেননি। তাদের এ বিষয়ে উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে বলেছেন। যদি প্রমাণিত হয় স্বাাক্ষর করেননি, তাহলে তারা জামিনদার থেকে মুক্ত হবেন। তিনি আরো জানান, ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে নানা ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।