২৪ গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ জিয়াদের রক্তমাখা পোশাকের স্মৃতি নিয়ে আগলে রেখেছে মা শাহিনুর বেগম

মোঃ জায়েদ হোসেন
দশমিনা উপজেলা প্রতিনিধি
মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে বাড়ি আসবে।এর পরে ভালো দেখে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিয়ে,নাতি নাতনি নিয়ে শেষ বয়সে বাকি সময় গুলো কাটাবে শহীদ জিহাদের মা। কিন্তু তার সেই স্বপ্নের কুঁড়ি পাঁপড়ি মেলে ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে গেছে অকালে।স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধীকোটা আন্দোলনে ছোড়া ঘাতকের গুলি কেড়ে নিয়েছে তার বুকের ধন জিহাদের তাজা প্রাণ। তার স্বপ্ন নিমেষেই পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। সন্তানকে হারিয়ে শূন্যতায় বিভীষিকায় নিরন্তর হাতে ফেরাই যেন তার নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন ছেলের অপেক্ষায় ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে দরজার পাশে কখনো বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে মা শাহিনুর বেগম। চোখে জল, কণ্ঠে আকুতি আমার জিহাদ আসবে না? প্রায়ই স্বপ্নে দেখা যায় তাকে যেন সে ঢাকা থেকে লেখাপড়া শেষ করে আবার ফিরে আসছে,মাকে ডেকে বলছে,মা আমি এসেছি। কিন্তু ঘুম ভাঙলেই বাস্তবের কঠিন দেয়ালে মাথা ঠেকে যায় তাঁর মায়ের।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে স্বৈরাচার বিরোধীকোটা আন্দোলন শেষে বাসায় ফেরার পথে ঢাক যাত্রাবাড়ি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হলে সহপাঠিরা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় জিহাদের।
পরে ২০ তারিখ শনিবার রাত ১০ টার দিকে তার মৃতদেহটি গাড়িযোগে গ্রামের বারিতে পৌঁছানোর পরে থানা পুলিশের চাপে তাড়াহুড়া করে ২১তারিখ সকাল ৬ টায় সদর ইউনিয়ন পরিষদের নিচে নামাজের জানাজা শেষে, নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে শহীদ জিহাদকে ।
মেধাবী ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে নিহিত শহীদ জিহাদ ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এসএসসি পাস করেন,স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পাশ করার পরে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাস নিয়ে অনার্স উত্তীর্ণ হয়ে ওই কলেজে এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।তিনি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিগন্ত সড়ক এলাকার নুরুল আমিন মোল্লার ছোট ছেলে। তিনি ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে কবি নজরুল সরকারি কলেজের এমএ প্রথম বর্ষের লেখাপড়া করতেন।
তাঁর মৃত্যু এখনো মানতে পারেন না মা শাহিনুর
বেগম। ঘরের ভেতরেই ছেলের শেষ স্মৃতি রক্ত মাখা পোশাক ও ছবি নিয়ে বসে থাকেন। মাঝে মাঝে কান্না চেপে রাখতে না পেরে ফুঁপিয়ে ওঠে বলেন ‘আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? কেন তাকে গুলি করে মেরে ফেলল? হয়তো তিনি জানেন তাঁর ছেলে আর ফিরবে না। তবুও বুকের গভীরে কোথাও আশা জমে রয়েছে ছেলের জন্য। প্রতিদিন ছেলের কবরের পাশে গিয়ে কান্না করে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এখন স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পরে একটি তার ইচ্ছা সন্তান হত্যার খুনিদের বিচার দেখে মরতে চান মা।
নিহিত শহীদ জিহাদের বাবা বলেন,আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ২ ঘন্টা আগে আমার সাথে কথা বলছিল বলে বাবা আমি ভাত খেয়ে শুয়ে আছি, এর এক দেড় ঘন্টা পরেই শুনি আমার ছেলে স্বৈরাচারী কোটাবিরোধী আন্দোলনে গেয়ে গুলি বিদ্রোহে হাসপাতালে ভর্তি,এর কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পাই আমার ছেলে মৃত্যু বরণ করেছে, এরই সময় মনে হয়েছে আমার মাথায় আসমান ভেঙে পড়েছে সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে,পরে ২০ শে জুলাই জিহাদের মৃতদেহটি দেশে আনার পরে স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনী ধারা অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে পড়ি, ওই পুলিশ বাহিনী আমার বড় ভাই রুহুল আমিন মোল্লা ও আমাকে গুলি করবে সেই প্রস্তুতিও নিয়েছিল, তখন আমাদের করার কিছু ছিল না,আল্লাহ আমাদের এই পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছে। আমার ছেলে মৃত্যুর আজ এক বছর হলেও পাইনি এর কোন বিচার,বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি আমার ছেলে হত্যার খুনিদের বিচার দেখে মরতে চাই।