মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার আম্বিয়া সেরীন আবাসিক এপার্টমেন্ট ভবনে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:-
নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন জামালখান এলাকায় আম্বিয়া সেরীন নামের একটি আবাসিক এপার্টমেন্ট ভবনে ১০৮টি পরিবার অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সেই এপার্টমেন্টের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মঈনুদ্দীন৷
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে গত ১৫ জুলাই করা সেই অভিযোগের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভবনটির নানান অনিয়মের তথ্য।
এদিকে ভবনটির বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের পাশেও রাখা হয়নি কোন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা৷তাছাড়া ভবনটির অগ্নি নির্বাপনে একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে রাখা ৪০টির অধিক অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০২২ সালে৷ অথচ মেয়াদ শেষে এসব ফায়ার এক্সটিংগুইশার গুলোর রিফিল করার দ্বায়িত্ব ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির৷
২০০৮ সালে ভবনটি ৭ তলার অনুমোদনের
একটি কাগজ সমিতির সভাপতি দেখালেও সেই অনুমোদনের কাগজ নিয়েও দেখা দিয়েছে সন্দেহ৷ শুধুমাত্র ৭ তলা ভবন নির্মানের অনুমতি দেয়া হলেও বাস্তবে সেখানে বেইজমেন্ট ছাড়া ৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷জামাল খান প্রেসক্লাবের পাশ দিয়ে উঠে গেছে একটি পাহাড়ি পথ, কয়েক দশক আগেও যে পাহাড় ছিল গাছ-গাছালিতে ভরপুর এখন সেখানে উঁচু উঁচু ভবন৷
এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় ১৬ জামাল খান হোল্ডিং এ ৪৬.৫১ শতক জমির ওপর স্থাপিত হয় আম্বিয়া সেরীন নামের একটি আবাসিক এপার্টমেন্ট ভবন৷ পাহাড়ের টিলায় কোন বেইজমেন্ট পার্কিং এর অনুমতি দেওয়া না হলেও ভবনটিতে বেইজমেন্ট কার পার্কিং নির্মাণ করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ অবৈধ৷ এছাড়া এতো বিশালাকার ভবনের চারপাশে নুন্যতম কোন জায়গা ছাড়া হয়নি৷ অথচ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী পর্যাপ্ত জায়গা ছাড়া বাধ্যতা মূলক৷ এছাড়া ভবনের ছাদ দখল করে একাধিক কমিউনিটি হল নির্মান করা হয়েছে যা অবৈধ ফ্লোর হিসেবে নির্মিত৷ ভবনটির ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়া মোঃ মঈনুদ্দীন সিডিএ
তে দাখিলকৃত আবেদনে ভবনটিতে কোন ফায়ার এক্সিট না থাকা সহ নানান অভিযোগ উত্থাপিত করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি ভবনটির শুরু থেকে আজ অব্দি দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ স্বপরিবারে এই ভবনেই বসবাস করছেন৷ শুধু তাই নয় গত ২০১৬ সালেও তিনি এই ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন৷নাম প্রকাশ না করার শর্তে এপার্টমেন্টের এক বাসিন্দা জানান, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই এই ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলাম৷ ৫ আগস্টের পর মোঃ মঈনুদ্দীন নিজেকে বিএনপি নেতা ও একজন সরকারী আইন কর্মকর্তা পরিচয়ে ব্যাপক দাপট দেখাতে শুরু করেন৷ তিনি হঠাৎ করেই একজন ফ্ল্যাট মালিকের সাথে ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে সিডিএ তে একটি অভিযোগ করে বসেন৷ সেই অভিযোগটি তিনি একক সিদ্ধান্তে করেছেন বলেও জানান একাধিক বাসিন্দা৷
৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতা,একটি আবাসিক ভবন মালিক সমিতির সভাপতি হয়েও তিনি তার আবেদনে ৫ আগস্টের আবেগের ইস্যুটি তুলে এনেছেন৷
অথচ গত ১৭ জুন চট্টগ্রামের খুলশী থানায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গেজেট ভূক্ত আহত এক জুলাই যোদ্ধার দায়ের করা মামলার এজাহার ভূক্ত আসামী হিসেবে নাম এসেছে মোঃ মঈনুদ্দীনের৷ এছাড়া চলতি বছর মে মাসে নগরীর ওয়াসার মোড়ে এক আইনজীবীকে মেরে আহত করার মামলাতেও নাম এসেছে মোঃ মঈনুদ্দীনের৷ ইতিপূর্বে একটি চুরির মামলা ছাড়াও পরকিয়া সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে৷ সিডিএ তে দেওয়া অভিযোগে যাকে আওয়ামী লীগের দোসর ও সন্ত্রাসী উল্লেখ করেছেন সেই ব্যক্তিকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর একাধিক ছবি এসেছে প্রতিবেদকের হাতে৷
আম্বিয়া গ্রুপ যা জানালেন,ভবনটির নির্মাতা ও ভূমি মালিক আম্বিয়া গ্রুপের প্রয়াত কর্ণধার আবুল কাশেম।সিডিএ তে দেয়া অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা সহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ উল্লেখ করেছেন৷ এসব বিষয়ে আম্বিয়া গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আজ থেকে ১২ বছর আগে আমরা ফ্ল্যাট গুলো সাব কবলায় হস্তান্তর করেছি৷ সেখানে যা যা সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা সব কাগজে কলমে বুঝিয়ে দিয়েছি৷ একজন ফ্ল্যাট মালিক যা যা পাওয়ার তা দলিলে উল্লেখ করেই বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে৷ বিক্রয় দলিলের বাহিরে আমাদের সাথে কোন ফ্ল্যাট মালিকের অন্যকোনো চুক্তি নেই৷ সেখানে আম্বিয়া গ্রুপের আরো ফ্ল্যাট ও স্থাপনা ছিল এবং এখনও আছে। বর্তমান সভাপতি নিজেরা নিজেরা ভোটাভুটি করে কমিটি করেছে অথচ তখন আম্বিয়া গ্রুপ বা জমি মালিককে বিন্দুমাত্র অবহিত পর্যন্ত করেনি৷ সিডিএ’র বরাবরে অভিযোগ গুলো ভিত্তিহীন৷ বরং এপার্টমেন্টের ময়লা রাখার স্থান ভেঙ্গে মোঃ মঈনুদ্দীন অবৈধ ভাবে তার অফিস নির্মান করেছে৷
নিজেদের ফ্ল্যাটের বিরুদ্ধে নিজের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মঈনুদ্দীন বলেন, যদি ভবনের অবৈধ অংশ থাকে তাহলে সব ভাঙ্গা হোক৷ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও কেন ফায়ার এক্সটিংগুইশার গুলো রিফিল করে কার্যকর করলেন না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এগুলো আগে থেকেই মেয়াদ নেই৷ সরেজমিন ঘুরে ভবনের বাহিরে যে অফিস গুলো নিয়ে তিনি আপত্তি জানিয়েছেন সেগুলোতে পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশারের দেখা মিলেছে যে গুলোর মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আছে৷ নিজের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই যোদ্ধাকে আহত করার অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি একজন বিএনপি পন্থী আইনজীবি অথচ তার বিরুদ্ধে মে মাসে আরেক আইনজীবীকে আহত করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঐ আইনজীবী হয়তো জানতেন না আমিও আইনজীবী৷ তার বিরুদ্ধে চুরির মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, ওখানে ভুল হয়েছে আমি আসামী না বাদি৷ এতোদিন এসব নিয়ে কিছু বলেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে আমি কোনঠাসা ছিলাম৷ কোনঠাসা থাকলে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের আমলে কিভাবে সাধারণ সম্পাদক হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে সবাই মিলে বানিয়ে দিয়েছিল।
এদিকে ১২ বছর আগে যে ভবনটিতে মানুষ বসবাস করছে এতো বছর পর সেই ভবন নিয়ে ভবনেরই ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতির এমন অভিযোগ নজিরবিহীন বলে মনে করছেন সিডিএ’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা৷ যদি কোন ভবন নকশা বহির্ভূত ভাবে নির্মান করে তাহলে সেই ভবনের অবৈধ সব অংশের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সিডিএ’র অথরাইজ অফিসার-২ তানজিব হোসেন৷ ইতিমধ্যে সেই ভবনটির নকশা তলব করা হয়েছে বলেও জানান সিডিএ’র একটি সুত্র।