পঞ্চগড়ে মাদরাসার পরিচালক ও সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে শিকার্থীদের দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ
একেএম বজলুর রহমান পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় জমি দখলের উদ্দেশ্যে কোমলমতি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি মাদরাসার পরিচালক ও সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ভাউলাগঞ্জ জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ অনুযায়ী, মাদরাসা পরিচালক হাফেজ মাওলানা নুরুল আলম সফিক ও সহ-সভাপতি মমিনুল হক প্রামাণিকের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা জমির একটি টিন শেড ঘর ও ঘর সংলগ্ন দেয়াল হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলে।
এসময় ঘরের টিন ও ইট সরিয়ে ফেলা হয়। শিক্ষার্থীদের লাঠিসোটা হাতে টিনসেড ঘরে ও দেয়ালে আঘাত করতে দেখা গেছে—যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সরেজমিন ও নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক ৪৩৬ দাগে ১ একর ৪৬ শতক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে রেকর্ডভুক্ত হয় ১ একর জমি। এর মধ্যে ৪০ শতক ছোট ছেলে মনিরুজ্জামান মানিককে দেন তিনি। এই জমিতেই মানিকের গুদামঘর, বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে।
অভিযোগ করা হয়, এই জমির একটি অংশ দখলে নিতেই সোমবারের ঘটনাটি ঘটানো হয়। এমনকি সেখানে বসবাসরত এক ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘর ভেঙে চলে যেতে আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে।
জমির মালিক মনিরুজ্জামান মানিক বলেন, আমার বাবা আমার নামে ৪০ শতক জমি লিখে দিয়েছেন। এখন বড় ভাই মমিনুল কোনো প্রকার মালিকানা ছাড়াই দখল নিতে চাইছে। হুজুর ও মাদরাসার ছাত্রদের দিয়ে আমার ঘর ভাঙচুর করানো হয়েছে। এতে আমার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
স্থানীয় এক নারী শরিফা বেগম বলেন, মাদরাসার হুজুররা ছাত্রদের বলছিল ভাঙো, ভাঙো—আর বাচ্চারা ভাঙছিল। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এভাবে ব্যবহার করা কখনোই ঠিক হয়নি। ছোট বাচ্চারা যদি এভাবে সহিংসতা শিখে, তাহলে ভবিষ্যতে তারা কী শিখবে?”
অভিযুক্ত সহ-সভাপতি মমিনুল হক প্রামাণিক দাবি করেন, “আমার বাবা জমি মাদরাসাকে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা শুধু আবর্জনা পরিষ্কার করছিল। কেউ হামলা করেনি, বরং তারাই আমাদের উপর হামলা করেছে।
মাদরাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা নুরুল আলম সফিক বলেন, মাদরাসার জন্য রান্নাঘর দরকার। মমিনুল সাহেব কিছু জমি দিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা সেটি পরিষ্কার করছিল। কিন্তু একটি চক্র দ্বীনি শিক্ষার বিরুদ্ধে কাজ করছে। জমির সব কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে, যাচাই করে যার প্রাপ্য তাকে দেওয়া হোক।
অভিযুক্ত পরিচালক নুরুল আলম সফিকের বিরুদ্ধে পূর্বেও নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট এক সংঘর্ষে তিনি ছাত্র জনতার তোপের মুখে পড়েন এবং এক বিএনপি নেতার আঙুল কামড়ে ছিড়ে নিয়ে আহত করার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
জমি দখলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিজেদের নির্দোষ দাবি করে জমির কাগজপত্র যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।


