জাতীয়

‘সাকার মাছ, জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রের জন্য হয়ে উঠেছে হুমকিস্বরূপ ’

আদনান বিন হান্নান

সাকার এমন এক প্রজাতির মাছ, যা বিশ্বব্যাপী জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রের জন্য অধিক মাত্রায় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । মূলত আমাজন অববাহিকা থেকে এই মাছটি সারা বিশ্বের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

যে কারণে সাকার মাছ বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে :

সাকার মাছ হলো একটি সর্বভুক ধরনের শিকারি মাছ। এটি প্লেকো মাছ নামেও পরিচিত। সাকার মাছের ইংরেজি নাম Suckermouth Catfish বা Common Pleco। এটিকে স্থানীয়রা বলেন চ্যাকভাগা বা রোহিঙ্গা। এই মাছটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এশিয়ার মিঠা পানি অঞ্চলেও এই মাছটি দেখা যাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন। একুরিয়ামের ময়লা আবর্জনা, ফাঙ্গাস, শ্যাওলা পরিষ্কার করার জন্যই এই মাছের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেখতে একই রকম হলেও বাংলাদেশে চার প্রজাতি সাকার মাছের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সাকার মাছের প্রজনন অধিক দ্রুত হওয়ায়, দেশের জলাশয়ে এর ছড়িয়ে পরার হার অনেক বেশি। এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা মাথায় রেখে সাকার মাছকে ২০২২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। যেকোনো জলজ পরিবেশে বেঁচে থাকা এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে এই মাছ। দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সর্বোপরি জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে সাকার। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছসহ জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা, ছোট শামুকজাতীয় প্রাণী খেয়ে সাকার মাছ পরিবেশের সহনশীল খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে। জলাশয় পাড়ের ক্ষেত্রবিশেষ পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে পাড়ের ক্ষতি করে এবং জলাশয়ের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কমায়। এমনকি পানি ছাড়াও এই মাছটি ২৪ ঘন্টারও বেশি বেঁচে থাকার রেকর্ড করেছে । জলাশয়ে চলাচলের সময় সাকার মাছের অন্যান্য মাছের সাথে সংঘর্ষ হলে মাছের গায়ে সৃষ্টি হয় ক্ষতের। ধারালো দাঁত আর দুই পাশে সুচালো পাখনার জন্যই সাকার মাছ অন্যান্য মাছের জন্য হয়ে উঠে প্রাণঘাতি।

জীবন এবং জীবিকার মাঝেও সাকার মাছ গড়ে তুলেছে পার্থক্য :

বুড়িগঙ্গার মতো দূষিত জলাশয়ের মাঝেও এই মাছের রাজত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। বুড়িগঙ্গা নির্ভর জেলেদের বর্তমানে সব থেকে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে এই সাকার মাছ। ঝাকিজালে একেকবারে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কেজি সাকার মাছ উঠে আসছে জেলেদের জালে। সদরঘাট, থানারঘাট, রাজারঘাট এবং সোয়ারিঘাটের জেলেদের জালে অধিকহারে ধরা পরছে এই মাছ। জেলেদের পেশার পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্যতা তৈরি করেছে রাক্ষুসে এই সাকার মাছ। যেখানে সাধারণত জলাশয়ে দূষন এবং অক্সিজেনের অভাবে অন্যান্য মাছের বেড়ে উঠা এবং বেঁচে থাকতে অসুবিধা হয় সেখানে সাকার মাছ বেঁচে থাকতে পারে অনায়াসে । বুড়িগঙ্গার পাশাপাশি ঢাকার অন্যান্য নদীতেও এর দৌরাত্ম বাড়ছে দিনকে দিন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তুরাগ।

কিন্তু গবেষনায় দেখা যায়, সাকার মাছ কোন বিষাক্ত মাছ নয়। পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই মাছকে গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি মানুষের খাবারযোগ্য করে তোলাও সম্ভব এই মাছকে। কারণ সাকার মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড , প্রচুর পরিমাণে চর্বি এবং আরো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। যার মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করেও আয় করা সম্ভব প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।

You may also like

জাতীয়

এসএসসির সূচি প্রকাশ

  • ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সময়সূচি প্রকাশ করে
Uncategorized জাতীয় রাজনীতি সারাদেশ

পিরোজপুরে নানা আয়োজনে মহান বিজয় পালিত

  • ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪
পিরোজপুর প্রতিনিধি: নানা আয়োজনে পিরোজপুরে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পিরোজপুরের পুরাতন খেয়াঘাট শহীদ