আফ্রিকার আকাশে নীল হেলমেটের দীপ্তি: শান্তির রণাঙ্গনে বাংলাদেশের সাহসী কন্যা জান্নাত আফরোজ
আফ্রিকার আকাশে নীল হেলমেটের দীপ্তি: শান্তির রণাঙ্গনে বাংলাদেশের সাহসী কন্যা জান্নাত আফরোজ
মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
কঙ্গোর অনিশ্চিত আকাশ, সশস্ত্র বিদ্রোহী আর বিপদসঙ্কুল রণক্ষেত্র—এই কঠিন মিশন পাড়ি দিয়ে নীল হেলমেটকে নতুন মানে দিচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাহসী কন্যা পুলিশ সুপার (এসপি) জান্নাত আফরোজ। তিনি শুধু একজন কমান্ডার নন; তিনি বাংলাদেশের মর্যাদা বহন করা এক দৃঢ়চেতা প্রতীক, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ।
BANFPU রোটেশন–১৮ এর কমান্ডার হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন এমন এক মিশনে, যেখানে প্রতিটি দিন ছিল চ্যালেঞ্জ, প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল পরীক্ষার মতো। তারপরও নিজের দৃঢ়তা, নেতৃত্ব ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি পুরো ইউনিটকে এক সুসংগঠিত শক্তিতে রূপ দেন। মিশন সফলভাবে শেষ হলেও তিনি এখনো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর রাজধানী কিনশাশায় অবস্থান করছেন কন্টিনজেন্টকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বে—যা তার পেশাদারিত্বের প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
দেশেই যেমন, বিদেশেও তিনি দায়িত্ব ও মানবিকতার এক দুর্লভ সমন্বয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানবিক উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া এবং সামাজিক কাজে সক্রিয় উপস্থিতি তার পেশাগত পরিচয়ের বাইরেও তাকে নতুনভাবে তুলে ধরে। সহকর্মী ও স্থানীয়রা তাকে চেনে স্বচ্ছ, নির্ভীক ও কর্মঠ একজন কর্মকর্তা হিসেবে।
ব্যক্তিগত জীবনে শান্তিরক্ষার কঠিন দায়িত্ব সামলেও তিনি খুঁজে পান প্রকৃতির কোমলতা—পশুপাখির প্রতি তার মমতা তাকে আরও মানবিক করে তোলে। আহত বা অসহায় প্রাণী দেখলেই তিনি ছুটে যান সাহায্যের হাত বাড়াতে। আর সময় পেলে তিনি ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশের মনোরম সৌন্দর্যে, বিশ্বের রঙগুলোকে নিজের মতো করে দেখেন।
জাতিসংঘ মিশনে তার অসাধারণ নেতৃত্ব শুধু বাংলাদেশ পুলিশের গৌরব বাড়ায়নি; বরং প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশি নারী কর্মকর্তারা বিশ্ব শান্তিরক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তার মতো দক্ষ, সাহসী ও মানবিক নেতৃত্ব ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্ত, আরও সম্মানজনক করবে।
এসপি জান্নাত আফরোজ—কঙ্গোর অন্ধকারে আলো ছড়ানো সেই নীল হেলমেট, যিনি বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল করে তুলছেন।





