বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার না করলে ঢাকামুখী হবেন নেতাকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কার আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার না করলে ঢাকামুখী কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৬টায় উপজেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে এক বিক্ষোভ র্যালি বের করেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী ও মীর রাজিউর রহমান আসাদ।
এসময় মীর রাজিউর রহমান আসাদ বলেন, “আমাদের জেলা সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন ১২ জুলাইয়ের কাউন্সিলে এসে ফলাফল ঘোষণা করে চলে যান। ফেরার পথে কে বা কারা তার ওপর হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বুঝতে পারবেন, কারা আপনার ভাইয়ের (মির্জা ফয়সল আমিনের) ওপর হামলায় জড়িত ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তদন্ত না করেই জেলা কমিটির কিছু কুচক্রী মহল একতরফাভাবে আমাদের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর দায় চাপিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট দিয়েছে।
তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যারা বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিল, তাদেরই আজ হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এই বহিষ্কৃত দুই নেতাকে ছাড়া বালিয়াডাঙ্গীতে বিএনপিকে জনগণ কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। অন্য কাউকে নেতৃত্বে বসানো হলে, সেখানেও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া যাবে না। তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এই সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ তদন্ত করে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার না করা হলে, বালিয়াডাঙ্গী বিএনপি আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে আমরা ঢাকামুখী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ আলম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. টি এম মাহবুবুর রহমানকে প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ১২ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র কাউন্সিল অধিবেশনকে কেন্দ্র করে হানাহানি ও সংঘাতের ঘটনা সংঘটিত হয়। ঠাকুরগাঁও জেলাধীন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাড. মোঃ সৈয়দ আলম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ড. টি এম মাহবুবুর রহমান এ ধরণের হিংসাত্মক ও অশোভন আচরণের সাথে জড়িত থাকায় তাদেরকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৮ বছর পর গতকাল ১২ জুলাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সমিরউদ্দীন স্মৃতি কলেজ মাঠে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম (ছাতা প্রতীক) ও আবু হায়াত নুরন্নবী (চেয়ার প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথমে ছাতা প্রতীকের পক্ষে ২ ভোটে এগিয়ে থাকলেও পরে সেগুলো বাতিল করে ফলাফল ড্র ঘোষণা করা হয় এমন দাবী করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন ড. টিএম মাহবুবর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মুহিব অয়ন চৌধুরী ও মামুন আকতার সবুর বিজয়ী হন।
ভোটগ্রহণ চলাকালে সভাপতি পদের ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভোট কেন্দ্রে এসে যাচাই-বাছাই করে এ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম কে সভাপতি নির্বাচিত ঘোষণা করে বাড়ী উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন এসময় কে বা কাহারা তার বহনকারী গাড়ী ভাঙচুর করে তার উপর হামলা চালায়।
পরে গত ১৩ জুলাই বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্সিলের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেন এবং জেলা বিএনপির সভায় দুই নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠায়।