লালমনিরহাট তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনদুর্ভোগে নদীর পাড়ের মানুষের

লুৎফর রহমান,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
টানা অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে তৃতীয় দফায় লালমনিরহাট জেলার তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ছয়টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির সমতল বর্তমানে ৫২.২৬ মিটার, যা বিপদসীমা (৫২.১৫ মিটার) থেকে ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি প্রবাহ বাড়তে থাকায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় বন্যার চরম অবনতি হয়েছে। নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। আতঙ্কে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে। তিস্তার বাম তীরে তৃতীয় দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানির চাপে কয়েকটি রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকিতে, বিশেষ করে কালীগঞ্জের দক্ষিণ ভোটমারীর ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ হতে পারে। এই অংশ ভেঙে গেলে পানি সরাসরি কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বর্তমানে পানির সমতল ৫২.২৬ মিটার, যা বিপদসীমা (৫২.১৫ মিটার) থেকে ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানি প্রবাহ যত বাড়বে বন্যার শ্বঙ্কা ততই বাড়বে। এতে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটে তৃতীয় দফায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানির চাপের কারনে বেশ কিছু রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন ভোটমারীতে ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এ স্থানে তিস্তা নদীর মুলস্রোত ধারা বন্ধ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে রাস্তাগুলোতে চাপ পড়েছে। এটি ভেঙে গেলে নদী চলে আসবে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে।
তিস্তা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন,সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা ও বাঁধে। এগুলো রক্ষা করা না হলে হাজার হাজার বসতভিটা আর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে। তখন নদী এসে পৌঁছাবে উপজেলা শহরে।
তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকেই নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে, ফলে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে এবং মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন,তিস্তার পানি হুহু করে বাড়ছে।আমাদের জীবনযাপন এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দিনমজুর সামসুল আলম জানান, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। তিনি বলেন, “পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মানুষ চরম বিপাকে আছে। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে, কিন্তু কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত সহযোগিতা চাই।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন,”গতকাল থেকেই তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডের পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, রাস্তা-ঘাট’সব কিছু পানির নিচে চলে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা বেশি বিপদে পড়েছেন। অনেক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে, গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। আমি উপজেলা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত ত্রাণ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষের পাশে দাঁড়ান।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৫২ দশমিক ২৬ মিটার, যেখানে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।