সারাদেশ

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বললেন সাংবাদিক তথ্য নেয়ার কে, কেন তথ্য দিবো

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড়
সাংবাদিককে কেন তথ্য দিবো, সাংবাদিক তথ্য নেয়ার কে, আপনাকে কে পাঠিয়েছে এসব বলে মোবাইল ফোনে উচ্চ বাক্য বিনিময় করলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এক গণমাধ্যম কর্মীর সাথে।
ওই প্রধান শিক্ষকের নাম নুর কুতুবে আজম। তিনি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার এনবিএল হাজি লুৎফর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টি দেবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওখড়াবাড়িতে অবস্থিত। এটি  সাবেক ছিটমহল দহলা খাগড়াবাড়ি নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পরে দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম নুরুজ্জামান তার পিতার নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর আ স ম নুরুজ্জামান ও তার বাবা ল্যুফর রহমান পর্যায়ক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি মন্ত্রীদের আশ্বাসে দ্রুত এমপিও হবে এ আশায় শিক্ষিত বেকাররা টাকা নিয়ে ছুটেন সভাপতির নিকট। কিন্তু তাদের আশা আজও পুরন হয়নি।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে এটি নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমোদন পান। সে হিসেবে বিদ্যালয়ে ৭জন শিক্ষক ও ৪জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কথা। বিদ্যালয়ের ইন নাম্বার দিয়ে ব্যানবেস এর ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ে ১৯জন শিক্ষক ও  ৭জন কর্মচারী রয়েছে। এটি কিভাবে সম্ভব তার সত্যতা জানার জন্য সরজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় মাত্র ২ জন শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর কুতুবে আজমকে তথ্য চেয়ে ফোন দেয়া হলে তিনি সাংবাদিককে কেন তথ্য দিবো, সাংবাদিক তথ্য নেয়ার কে, আপনাকে কে পাঠিয়েছে এসব বলে মোবাইল ফোনে উচ্চ বাক্য বিনিময় করেন গণমাধ্যম কর্মীর সাথে। পরে ওই সংবাদকর্মী তথ্য অধিকার আইনে আবেদন চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবরে আবেদন করেন। বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক হাফেজ শাহ আলম আবেদনপত্রটি গ্রহন করেন।
ব্যানবেস এর ওয়েবসাইটে বিদ্যালয়ের ইন নাম্বার দিয়ে সার্চ দিলে দেখতে পাওয়া যায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নুর কুতুবে আজম, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে আলতাফুর রহমান, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন ৪জন। তারা হলেন শোয়েবুর রহমান, মোরশেদা তুন জান্নাত, লতা বেগম, কৃষ্ণপদ রায়। গনিতে হামিদুর রহমান, শারীরিক শিক্ষাতে জিয়াউর রহমান, কৃষিতে ফজলে রাব্বি, সহকারী মৌলভীতে হাফেজ শাহ আলম, হিন্দু ধর্মীয়তে দিপেন্দ্র নাথ রায়, চারু ও কারুকলাতে নুহিদা শুকরিয়া পূর্নতা, বাংলাতে রাধা রানী রায়, ইংরেজিতে শরিয়ত আলী।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ না থাকার পরেও মোশফিকুর রহমানকে ব্যবসা শিক্ষা বিষয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগ না থাকার পরেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি লিলি রানী রায়, জীব বিজ্ঞানে গীতা রানী দাস, ভৌত বিজ্ঞানে মহেশ চন্দ্র বর্মন, গ্রন্থকার ও তথ্য বিজ্ঞানে ইয়াছিন কবীরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জীব বিজ্ঞানের গীতা রানীর এমপিও না হওয়ার কারনে তিনি অন্য স্কুলে চলে গেছেন বলে জানা যায়।
ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক শরিয়ত আলী ও গনিত বিষয়ের হামিদুর রহমানের এমপিও না হওয়ার কারনে এনটিআরসির মাধ্যমে অন্য স্কুলে যোগদান করেছেন।
জানা যায়, বিদ্যালয়টির এমপিও ভুক্ত করা হয় ২০২২ সালের ৬জুলাই। মাধ্যমিকের পাঠদানের অনুমতি পায় ২০১৯ সালে। অনুমোদনের আগেই অতিরিক্ত শিক্ষক নেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়টি শুরুতেই নিম্ন মাধ্যমিক থাকার পরেও ৭জনের বিপরীতে ১৯জন শিক্ষক কিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা বোধগম্য হচ্ছেনা।
এছাড়াও বিভিন্ন পদে বর্তমানে ৭জন কর্মচারী রয়েছে। এখানেও কর্মচারী বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষক পদে ৫জন ও কর্মচারী পদে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন। বাকি শিক্ষক, কর্মচারীদের এখনো এমপিও ভুক্ত করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, বিদ্যালয়টিতে যেসব শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে। যারা বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে তাদেকে টাকা ফেরত দেয়নি।
তারা আরও জানান, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে আ স ম নুরুজ্জামান দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকার কারনে রমরমা ব্যবসা করেছেন নিয়োগ দিয়ে।
তারা আরও জানান,
আইনুল ইসলাম, মৌসুমি আক্তার, বিথী আক্তার, আব্দুল্লাহ আল মামুন,জাহাঙ্গীর আলম ও উত্তম কুমার নামে কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে চাকুরি দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। তাদের টাকা এখনো ফেরত দেননি।
অর্থের বিনিময়ে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম নুরুজ্জামান পলাতক থাকায় এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি যদি নিম্ম মাধ্যমিক হয় তাহলে ৭জন শিক্ষক ও ৪জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবে আর ২০২২ সালের নীতিমালা অনুযায়ী নবম শ্রেণির পাঠদানের অনুমতি পায় তাহলে ১০জন শিক্ষক ও ৬জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবে। মাত্রা অতিরিক্ত শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে তিনি জানান, আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,