পঞ্চগড়ে ১৫ লক্ষ টাকার ওয়াটার রিজার্ভার, উদ্ধোধনের পরেই অকেজো, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড়:
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পৌরসভার ভিতরে বাজারের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে অগ্নি নির্বাপনের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল আধুনিক সুবিধা সুবিধা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার। এতে নির্মানে খরচ করা হয় ১৫ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা।
দুই লক্ষ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ওয়াটার রিজার্ভারটি উদ্বোধনের দেড় মাসের মধ্যেই কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে। রিজার্ভারটিতে পানি না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বোদা বাজারের ব্যবসায়ীরা।
বোদা পৌরসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা হলো বোদা পৌর বাজার। শুষ্ক মৌসুমে এখানে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে পর্যাপ্ত পানির অভাবে আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। যার কারনে ব্যবসায়ীরা বারবার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা বিবেচনায় বোদা পৌর কর্তৃপক্ষ অগ্নি নির্বাপনের জন্য এ আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার স্থাপন করে।
রিজার্ভারের সঙ্গে নির্মিত হয়েছে একটি পাম্প হাউস, যা সার্বক্ষণিক পানি উত্তোলন এবং পানি সরবরাহে সক্ষম। ফায়ার সার্ভিসের স্ট্যান্ডার্ড হোস সংযোগের উপযোগী ভাবে এটি তৈরি করা হয়। যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত সংযোগ নিয়ে পানির সাহায্যে আগুন নেভানো যায়। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে এতে লকিং সিস্টেম ও গার্ডরুমও স্থাপন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের দেড় মাসের মধ্যেই দেখা দিয়েছে সমস্যার। রিজার্ভারে ভরাট করা পানি কয়েক দিনের মধ্যেই শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে সেটি কোনো কাজে আসছে না।
জানা গেছে, বোদা পৌরসভার অর্থায়নে ১৫ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার এই নির্মাণ কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ১১ মার্চ। ৫৫ দিন কাজের পর এটির নির্মান কাজ শেষ করা হয় ৫ মে। উদ্বোধনের পর থেকেই রিজার্ভারে পানি থাকছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বোদা বাজারের আল মামুন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বোদা বাজারে প্রতি বছরই দুই-একবার করে আগুন লাগে। এই কারণেই বোদা পৌরসভা থেকে আমাদের জন্য এই রিজার্ভার তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই এতে পানি থাকছে না। পানি না থাকলে এই ট্যাংকি দেওয়া আসলেই অর্থহীন। দ্রুত এর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বাজারের যুক্ত বাবু নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এই পানির ট্যাংকি তৈরি করা হয়েছে আগুন লাগলে তা ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু এখন পানি থাকছে না। যদি হঠাৎ যদি আগুন লাগে তাহলে ভয়াবহ বিপদে পড়ব আমরা।
সুকুমার দত্ত নামে এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত টাকা খরচ করে কাজটা করা হয়েছে, কিন্তু পানি না থাকলে লাভটা কী? বিপদে পড়লে ফায়ার সার্ভিস এখান থেকে পানি পাবে। আমরা ভেবেছিলাম খুব কার্যকর কিছু হবে, কিন্তু সেটা হয়নি।
তৌহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, তিন-চার দিন আগেও পানি ভরাট করা হয়েছিল কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই পানি নিচে নেমে গেছে। এখনো উদ্বোধনের দুই মাসও হয়নি, তাতেই পানি থাকছে না। আগুন লাগলে তো ভয়াবহ ক্ষতি হবে।
বোদা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দীপঙ্কর অধিকারী বলেন, ১৫ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে আমরা এই আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নির্মাণ করেছি, যেখানে দুই লক্ষ লিটার পানি ধারণ করার সক্ষমতা রয়েছে। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, রিজার্ভারে পানি থাকছে না। ইউএনও স্যার নিজে গিয়ে পরিদর্শন করেছেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে। আমরা দ্রুত তা পরীক্ষা করে রিপেয়ার করবো।
বোদা পৌরসভার প্রশাসক রবিউল ইসলাম বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বোদা বাজার এলাকায় পানি সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সম্ভবত কোনো লিকেজ বা প্রযুক্তি গত কারণে পানি কমে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনকে মেরামত করে পুনরায় পানি সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।