গৃহবধূকে ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনে মামলা হলেও আসামি আটক করতে পারিনি পুলিশ

সাব্বির হোসাইন আজিজ, মাদারীপুরঃ মাদারীপুরে এক গৃহবধূকে জোর পূর্বক ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ ও পরবর্তীতে নির্মম শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্থানীয় সোহাগ সরদার (৪৫) তার সহযোগিদের ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা হলেও এখনো পুলিশ কাউকে আটক করতে পারিনি। আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর পরিবার।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সুত্রে জানাযায়, প্রায় দুই মাস আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূ তার দুই সন্তান নিয়ে সদর উপজেলা কেন্দুয়া ইউনিয়ন ঘটকচর এলাকার সোহাগ সরদারের ২য়তলা বিল্ডিংয়ের নিচ তলার বাড়িতে ভাড়া ওঠেন। তার স্বামী প্রবাসে থাকায় তিনি ছোট দুই সন্তান নিয়ে ওই ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। তবে বাড়ির মালিক লম্পট সোহাগের কুনজরে পরেন ভুক্তভোগী। সুযোগ বুঝে বাড়ির মালিক সোহাগ সরদার গত ২৭ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত নয়টার দিকে এ গৃহবধূর রুমে ঢুকে তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলা’র হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীকে জিম্মি করে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এবং ধর্ষনের ভিডিও ধারণ করে রাখে। সেই ধারণকৃত ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে লম্পট সোহাগ। শারিরীক নির্যাতন সইতে না পেরে ভুক্তভোগী গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে তার মাকে জানায়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে, ক্ষিপ্ত হয়ে ১লা অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে সোহাগ সরদার ও তার পরিবারের লোকজন গৃহবধূর রুমে ঢুকে মারধর ও পাশবিক নির্যাতন করেন। এমনকি গরম লোহার রড দিয়ে গৃহবধূর স্পর্শ কাতর স্থানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে দগ্ধ করা হয়।ভুক্তভোগীর পরিবার খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বান ইউনিটে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো সোহাগ সরদার, জসিম সরদার, ঝরনা বেগম, লামিয়া আক্তার, কালাম সরদার, মিম আক্তার ও সাজিদ হাওলাদারকে। তবে মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করেছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ মঙ্গলবার সকালে ঘটকচর এলাকায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীর পরিবার। শতাধিক নারী-পুরুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেন। তারা ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “এমন বর্বর ঘটনার বিচার না হলে সমাজে নারীদের নিরাপত্তা থাকবে না। আমরা ধর্ষক ও নির্যাতনকারীদের ফাঁসি চাই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান আসামি সোহাগ সরদার আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। ফলে মামলার বিষয়ে পুলিশ তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, লোক লজ্জার ও ভয়ের কারণে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে আমাকে একাধিকবার ধর্ষন করেছে বাড়ির মালিক সোহাগ সরদার, এ ঘটনা আমার মাকে জানালে, লম্পট সোহাগ ও তার পরিবাররে সবাই মিলে আমার রুমে ঢুকে আমাকে মারধর ও পাশবিক নির্যাতন করেছে। এমনকি যে জায়গাগুলোতে তারা ছ্যাঁকা দিয়েছে, সেগুলো এত স্পর্শকাতর স্থান যে আমি মুখে বলতে পারছি না। আমি ওদের কঠিন শাস্তি চাই।
এদিকে এলাকায় ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এমন জঘন্য ও নৃশংস নির্যাতনের ঘটনা ঘটকচর এলাকায় আগে ঘটেনি। এলাকার সচেতন মহল প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।