অন্ধ হয়েও ভিক্ষা নয়, ডিম–বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন কালুখালীর গোলাপ বিশ্বাস
বোরহান উদ্দিন, কালুখালী (রাজবাড়ী) :
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের বিলমানুষমারি গ্রামের গোলাপ বিশ্বাস (৩৭) জন্মগতভাবে অন্ধ নন। ছয় বছর বয়সে কালা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। অন্ধত্ব, দারিদ্র্য ও সংসারের নানা সংকট সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি গোলাপ। ভিক্ষা নয়—নিজের পরিশ্রমেই জীবনযাপন করতে চান তিনি।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় গোলাপ বিশ্বাস। বাবা নায়েব বিশ্বাস দিনমজুর, মা ভানু বেগম বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। ১৬ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল গোলাপের। তবে ছেলে আলামিনের জন্মের ১৮ দিনের মাথায় স্ত্রী প্যারালাইজড হয়ে বাবার বাড়িতে চলে গেলে গোলাপ একাই ছেলেকে লালন-পালন শুরু করেন। বর্তমানে আলামিনের বয়স ১৫, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে।
গত দেড় বছর ধরে গোলাপ মদাপুর বাজারে সিদ্ধ হাঁসের ডিম ও বাদাম বিক্রি করেন। চোখে দেখতে না পেলেও নিজ পায়ে হেঁটে প্রতিদিন বাজারে যান তিনি। দোকানে দোকানে ঘুরে ডিম–বাদাম বিক্রি করেন। কখনো বাজারের মজিবর মণ্ডলের চায়ের দোকানের পাশে বসে থাকেন—সেখানেই ক্রেতারা এসে কিনে নেন।
গোলাপ বিশ্বাস বলেন,
“আল্লাহ আমার চোখে আলো দেননি, তাতে কী হয়েছে! আমার তো হাত–পা আছে। ভিক্ষা করে খেতে চাই না। নিজের পরিশ্রমেই পরিবার চালাতে চাই।”
তার মা ভানু বেগম বলেন,
“আমার ছেলে অনেক কষ্ট করে। যতদিন আমরা বেঁচে আছি, ও আমাদের সঙ্গেই আছে। ভিক্ষা করে না, কেউ ভালোবেসে দিলে তবেই নেয়। আপনারা ওর পাশে দাঁড়াবেন।”
বিষয়টি নিয়ে কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া আফরোজ বলেন,
“উনি যে কাজ করছেন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সমবায়, যুব উন্নয়ন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাঁকে সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
অন্ধত্ব থাকা সত্ত্বেও নিজের সম্মান টিকিয়ে রেখে পরিশ্রম করে বাঁচতে চান গোলাপ বিশ্বাস। স্থানীয়দের মতে, সামান্য সহায়তাও তাঁর জীবন সংগ্রামে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।





