মাদারীপুরে রাতের আঁধারে কবর থেকে লাশ উধাও অবিশ্বাস্য ঘটনায় স্তব্ধ এলাকাবাসী।
সাব্বির হোসাইন আজিজ, মাদারীপুরঃ
মাদারীপুর পৌর শহরে ঘটেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী হৃদয়বিদারক ঘটনা। মৃত্যুর ১৯ বছর পরে কবর থেকে এক মায়ের দেহাবশেষ (লাশ) উত্তলন করে উধাও করা হয়েছ ।অভিযোগ উঠেছে মুকুল খান নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি দুদিন আগে ঘটলেও আজ (৮ ডিসেম্বর) সোমবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে রাতের আঁধারে গোপনে করা এই কর্মকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভ ও নিন্দায় ফুঁসে উঠেছে।
সুফিয়া বেগম শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পরে ছেলের বাড়ির আঙিনায় থাকার। তবে মারা যাওয়ার ১৯ বছর পরে সেই ইচ্ছা আর রইল না।
পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, পৌর শহরের কুকরাইল এলাকার মরহুম সাইদুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া বেগম দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর আগে মা-রা যান। মৃত সুফিয়া বেগম ছিলেন ধর্মপরায়ণ ও পর্দানশীল নারী। জীবনদ্দশায় ছেলেদের অনুরোধ করেছিলেন, মৃত্যুর পরে তোদের বাড়ির আঙিনায় রেখো আমাকে। পরিবারের সদস্যরাও তাঁর শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে বাড়ির এক কোনে দাফনও করেন। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে কবরটি ছিল বড় ছেলে টুটুল খাঁন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পরম যত্নে।
জানাযায়, বড় ছেলে টুটুল খান কঠোর পরিশ্রম করে প্রায় বিশ বছর আগে একটি জমি ক্রয় করেন। সেই জমিতে বাড়ি করে বসবাস করছিলেন সবাইকে নিয়ে। কয়েক বছর পরে টুটুলের মা সুফিয়া বেগম মা-রা যান। ভাই মুকুল খান বয়সে অনেক ছোট হওয়ায়, টুটুল খান তার অর্ধেক জমিও লিখে দেন। মা সুফিয়া বেগম মা-রা যাওয়ার বেশ কিছুদিন পরে স্থানীয় গন্যমান্য লোকজনের সহায়তায় জমি ভাগ করে দেন। তবে মরহুম সুফিয়া বেগমের কবর ছোট ছেলে মুকুল খানের জায়গায় পরে। সকলের উপস্থিতি সামনে মায়ের করব স্বযত্নে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে মুকুল খান নেশায় আসক্ত হয়ে পরেন। তবে সুফিয়া বেগমের মৃত্যুর ১৯ বছর পরে ২০২৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোর রাতে ঘটে গেল মহা হৃদয়বিদারক ঘটনা। লোভে পরে মুকুল খান পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্নীয়স্বজনদের না জানিয়ে রাতে আঁধারে লোকজন ভাড়া করে কবর থেকে সুফিয়া বেগমের দেহাবশেষ চোরের মতো উত্তলন করে বস্তায় ভরে মিলমাঠের গনকবরস্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সোমবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে সুফিয়া বেগমের অন্য সন্তানেরা ও ভাইবোনদের কান্নার রোল পরে যায়। অন্যদিকে ধর্মীয় বিধান না মেনে কবর স্থানান্তর করারয় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরোও বলেন, মা সন্তানের সর্বশেষ আশ্রয়। সেই মায়ের দেহাবশেষ রাতের আঁধারে গোপনে সরিয়ে নেওয়া চরম অমানবিকতা ও আইনগত অপরাধ। আত্মীয়স্বজন জানান, ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী কবর স্থানান্তর করার রয়েছে কঠোর কিছু নিয়ম, যা কোনোভাবেই মানা হয়নি।এঘটনায় প্রশাসনের কাছে স্থানীয়রাও মুকুল খানের বিচার দাবি জানিয়েছেন।
মরহুমের বোন ফেন্সী বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বোন মৃত্যুর সময় অছিয়ত করেন, আমি মা-রা গেলে এই বাড়ির এক কোনায় আমাকে কবর দিস। সুফিয়া বেগম মা-রা গেলে অছিয়ত অনুসারে তার পরিবারের লোকজন নিজ বাড়িতেই করব দেয়। হটাৎ আমরা আজ সকালে জানতে পারি মুকুল আমার বোনের লাশ রাতের আঁধারে উত্তলন করে বস্তায় ভরে মিল মাঠের গনকবরে মাটিচাপা দিয়েছে। আমরা কুলাঙ্গার মুকুলের বিচার চাই।
মরহুমের ভাই, দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর পরে তার অছিয়ত অনুসারে টুটুলসহ অন্য সন্তানেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ বাড়িতেই কবর দেয়। দীর্ঘ ১৯ বছর পরে জমি বিক্রির লোভে বোনের ছোট ছেলে মুকুল খান, তার মায়ের দেহাবশেষ (লাশ) উত্তলন করে বস্তায় ভরে একটি গনকবরে মাটিচাপা দিয়ে দেয়। এরকম কুলাঙ্গার সন্তান যেন কারো না জন্ম না হয়। আমরা মুকুকের বিচার চাই।
মরহুম সুফিয়া বেগমের বড় ছেলের টুটুল খান বিদেশ থেকে মুঠোফোনে বলেন, আমি প্রবাসে থাকি যদি আমার ছোট ভাইয়ের জমি অথবা টাকার দরকার থাকতো তাহলে আমাকে বললে আমি জমির চার গুণ দাম দিয়ে দিতাম তারপরও আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা আমি রক্ষা করতাম তিনি অশ্রুসিক্ত চোখে আরো বলেন, আমি নিজের টাকায় জমি কিনে মুকুলকে স্বেচ্ছায় নিজের জমির ভাগ দিয়েছি। আমার কাছে যদি আরো জমি অথবা আমার বাড়িও চাইতো আমি তাকে লিখে দিতাম কিন্তু ১৯ বছর পর আমার মায়ের দেহাবশেষ উত্তলন করে বস্তায় ভরে মুকুল ফেলে দিয়েছে। এই ঘটনা আমি সইতে পারছি না। আমার হৃদয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয় সমাজের সকলের কাছে আমার দাবি দয়া করে এর সুষ্ঠু বিচার করবেন। এবং আমি আমার মায়ের দেহাবশেষ আমার বাড়িতে রাখতে চাই।
এবিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ওসির আদিল হোসেন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।





