জাতীয় সারাদেশ

পাথরঘাটায় জেলে বিধবাদের মুখে হাসি ফোটাতে ‘সাদাকাহ ও উপকূল’র কুরবানি

ইব্রাহীম খলীল, পাথরঘাটা।

রিনা বেগম, স্বামী সাগরে নিখোঁজ হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে মাছ ধরার সময়। আর ফিরে আসেনি। একমাত্র ছেলে সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন করছে।‌ অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় চলে সংসার। শ্বশুরের রেখে যাওয়া এক টুকরো কুড়ে ঘরে থাকে। শুধু রিনার সংসারই নয় তার মতো অসংখ্য নিখোঁজ জেলের  স্ত্রী ও পরিবারের দিন যাপন চোখে পরার মতো‌। অনেকের সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরায়।  তারপরও যে দিন চালাতে হয়, পেটের দায় অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। একদিন অন্যের সাহায্য না পেলে চুলো জ্বলেনা। তেমনি কুরবানীর মাংস না পেলেও যে লাভলীর চুলো জ্বলবেনা;

তাই কুরবানীর মাংস দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে মুখ বেঁধে চলে আসেন‌ লাভলী, আলেয়া, মর্জিনা ও রিনা বেগম। চোখে মুখে কষ্টের ছাপ রয়েছে। চোখ যেন পানিতে টলটল করে। একাধিক  নারীর চোখে পানি আর কষ্টের ছাপ। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা। সকলের চোখে পানি টলটল করলেও মাংস হাতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের চোখে পানি থাকলেও মুখে হাসি।

কুরবানী আসলেই এ দিনে এক টুকরো মাংসের জন্য বিত্তশালীদের দুয়ারে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে অনেক দরিদ্র মানুষ। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম; স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দরিদ্রদের দুয়ারে গিয়ে তাদের হাতে মাংস পৌঁছে দেয়ায় তারা অনেক খুশি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘সাদাকাহ’ ও গবেষনা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’র সমন্বয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় এমন ব্যতিক্রম আয়োজন করে। আর আয়োজনের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক পরিবারের মাঝে কুরবানীর মাংস দেয়া হয়েছে।

সালেহা বেগম, রিনা বেগম, মর্জিনা বলেন, আমরা এই মাংস পেয়ে খুব খুশি। এক বেলা মাইয়া-পোলা নিয়া তৃপ্তি সহকারে খাইতে পারমু। যারা আমাগো এই মাংস দেছে তাদের জন্য দোয়া করি। তারা আরও বলেন, অনেক জায়গায় মাংস দেয়া হয় তা খুবই অল্প, এখানে যারা দিছে তা দিয়া ভালই খাইতে পারমু।

মর্জিনা বেগম বলেন, স্বামী সাগরে নিখোঁজ হয়েছে ২০১৮ সালের এপ্রিলে। এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই। সেই থেকেই ছেলেডাসহ কোন রকম বেচে আছি‌। এই মাংস দিয়া অন্তত এক বেলা খাইতে পারবো।

অ্যাড. মনোজ কুমার কীর্তনীয়া বলেন, আমরা আসলেই এই ব্যতিক্রম আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সেই প্রবাসে থেকে তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে দুস্থদের মাঝে সহায়তা দিয়ে আসছে এটি আসলেই ভাল উদ্যোগ আমরা চাই এ আয়োজন অব্যাহত থাকুক।

সাদাকাহ’র প্রধান নির্বাহী মাওলানা শহিদুল্লাহ বলেন, সাদাকাহ ইউএসএ মূলত স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন। সবার সহযোগিতাকে তৃনমূলের অসহায় মানুষের কাছে পৌছে দিতে কাজ করি আমরা। প্রতিবছরের মত এবারো দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ১৬ টি স্থানে দরিদ্র হতদরিদ্রদের মাঝে কোরবানীর মাংশ বিতরণ করা হয়েছে।

উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, উপকূলের অসংখ্য নারী অসহায় দিন‌ যাপন করছেন। কারো স্বামী সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কারো স্বামীর মৃত্যু‌ হয়েছে। এসব নারীরা অসহায় দিনযাপন করছেন বছরের পর বছর ধরে। কুরবানী তো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। সাদাকাহ সংগঠনটি প্রতি বছর দরিদ্রদের মাঝে কুরবানীর মাংস দেন এটা খুবই প্রশংসনীয়। অনেক জেলে পরিবার আছে কুরবানীর দিনে সন্তানদের নিয়ে এক বেলা ভালো খাবার খেতে পারে না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং