সারাদেশ

পটুয়াখালীতে মেছো বিড়াল সংরক্ষণে মোবাইল প্রচার ভ্যান উদ্বোধন

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধঃ– বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে পটুয়াখালীতে চালু হলো মেছো বিড়াল সংরক্ষণভিত্তিক মোবাইল প্রচার ভ্যান। উপকূলীয় বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় (২৭ মে) মঙ্গলবার পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি) এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যানটির উদ্বোধন করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যশোরের সামাজিক বন বিভাগে একই ধরনের সচেতনতামূলক ভ্যান উদ্বোধন করেন। পটুয়াখালীতে এটি সেই ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ভ্যানটির প্রধান লক্ষ্য পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে ঘুরে মেছো বিড়াল সংরক্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা। এর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে এবং মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে যে মেছো বিড়াল কোনো হিংস্র প্রাণী নয় বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপকূলীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক মানুষ চিতাবাঘের মতো দাগ থাকার কারণে মেছো বিড়ালকে বাঘ মনে করে হত্যা করে ফেলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি নিরীহ প্রাণী, যার প্রধান খাদ্য মাছ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পোকামাকড় ও ক্ষতিকর সরীসৃপ। ফলে এটি কৃষিক্ষেত্রে উপকারী এবং প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবেও কাজ করে। মেছো বিড়াল মৃত ও অসুস্থ প্রাণী খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার রাখে এবং রোগজীবাণু ছড়ানো রোধে সহায়তা করে। তাই একে হত্যা করা শুধু নিষ্ঠুরতাই নয়, বরং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রাণীটি আমাদের বাস্তুতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষাকারী। এর সংখ্যা কমে গেলে ইঁদুরের প্রজনন বাড়বে, ফসলের ক্ষতি হবে এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়বে। তাই আসুন ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আমরা সবাই মেছো বিড়ালকে ভালোবাসি, সংরক্ষণ করি।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহসিন উদ্দীন বলেন, “মানুষকে মেছো বিড়াল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাতে পারলেই এর ওপর অকারণ হত্যা বন্ধ করা সম্ভব। এটি হিংস্র নয়, বরং পরিবেশবান্ধব একটি বন্যপ্রাণী। আমাদের প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলো—ভুল ধারণা ভাঙা, সচেতনতা সৃষ্টি, এবং এই প্রাণীটির জীবন রক্ষা করা।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন এনিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালী প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের রেস্কিউ অ্যান্ড রিলিজ উইং প্রধান এবং সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধারকর্মী মোঃ আসাদুল্লাহ হাসান মুসা। তিনি বলেন, “মেছো বিড়ালের সাথে মানুষের সংঘর্ষের মূল কারণ হলো সচেতনতার ঘাটতি। অনেক সময় মানুষ না বুঝেই এই নিরীহ প্রাণীটিকে ক্ষতি করে ফেলে। অথচ মেছো বিড়াল আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা উপকূলীয় বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি, যাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যায় এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সহাবস্থান গড়ে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, অচিরেই এই ভুল ধারণাগুলো দূর হবে এবং প্রাণী ও মানুষের মাঝে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে, যেখানে বন্যপ্রাণীকে হুমকি নয় বরং প্রকৃতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।”

বর্তমানে ভ্যানটি পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে ঘুরে সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবেশপ্রেমী ও স্থানীয় বাসিন্দারাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এমন উদ্যোগ শুধুমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণই নয়, বরং একটি পরিবেশবান্ধব সমাজ গঠনের পথেও সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং