শিক্ষাঙ্গন

অসহায় হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে আল ফালাহ একাডেমি নূরানী মাদ্রাসা

মোঃ সোহেল রানা :
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে অজপাড়া গাঁয়ে বসবাসরত ভূমিহীন জনগোষ্ঠী, দিনমজুর, দারিদ্রক্লীষ্ট এবং নারী শিক্ষায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষাদান ও শিক্ষার আলো বিস্তারের কাজে উৎসর্গীকৃত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল ফালাহ একাডেমি নূরানী মাদ্রাসা। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা ১৫ নং রুপসা(উঃ) ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ড ভোটস্কুল সংলগ্ন  গাব্দেরগাঁও গ্রামে অবস্থিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, ঢাকা শহরের বাসিন্দা ও শিক্ষানুরাগী সাংবাদিক আব্দুর রহমান ও তার পরিবারবর্গের সাহায্যে মাদ্রাসাটি নির্মিত হয় ২০১৯ সালে।  প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময় থেকে আব্দুর রহমান  ও তার বন্ধু বান্ধব এবং আত্নীয় স্বজন ও দানশীল ব্যক্তিগনের সার্বিক অর্থায়নে সম্পূর্ণরুপে পরিচালিত হচ্ছে নানাবিধ কর্মকান্ড। মাদ্রাসাটিতে অত্র অঞ্চলের সকলস্তরের জনগনের সন্তান সন্ততি এবং এতিম ও দূস্থদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাচ্ছে সমস্ত সুযোগ সুবিধা। প্রতিমাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যায় হয় স্কুল শিক্ষক বেতনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে। বিশাল পরিসর ভাড়া জায়গা একীভূত ২৫ শতাংশের মধ্যে নির্মিত একাডেমিক ভবন, আবাসিক হোষ্টেল, আরবি পড়াশোনার আলাদাভাবে মাদ্রাসা, কাম্য আয়তনে খেলার মাঠ, শান বাঁধানো ঘাটসহ পুকুর, বাগ -বাগান, আঙ্গিনায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় বিমোহিত ফুলের বাগান ও শহীদ মিনারসহ সকল প্রকার শিক্ষার উপকরণ বিদ্যমান রয়েছে অরফ্যান্স সেন্টারে। বিগত সবগুলো পরীক্ষায় পাশের হার শতকরা একশভাগ। বার্ষিক পরিক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক।  গত ২০২৪ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ছিলো প্রায় ১৮০ জন বর্তমানে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ৪ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যার কারণে অত্র অঞ্চলে সর্বশ্রেণীর উন্নত ও গতানুগতিক থেকে ভিন্ন পরিবেশে শিক্ষাদানের লক্ষমাত্রা নিয়ে নিরলস কাজ করছেন প্রতিষ্ঠাতাসহ পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকমন্ডলিগন।

শিক্ষক মণ্ডলী : মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য মেধাবী, দক্ষ, পরিশ্রমী ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকার বিকল্প নেই। উন্নত বিশ্বের আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির অনুকরণে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক Workshop ও Practise Teaching সহ আধুনিক পদ্ধতি, নবতর কলাকৌশল প্রয়োগ করে পাঠদান সহজতর, আকর্ষণীয় ও বিজ্ঞানসম্মত করার জন্য গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত  ও যোগ্য শিক্ষক দ্বারা টিচিং প্রদান করে শিক্ষকদের দক্ষতা ও কৌশল উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হয়।
পাঠদান পদ্ধতি: বর্তমান শিক্ষা সম্পূর্ণ প্রাইভেট ও কোচিং নির্ভর। এই কঠিন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে পাঠদান দান করা হয়। সকল শ্রেণীতে প্রতিদিন প্রথম ২০ মিনিট পূর্ববর্তী দিনের পড়ার উপর পরীক্ষা নেয়া হয়। ফলে বাসায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে পড়া শিখতে হয়। আবার শ্রেণীর পঠিত বিষয়ের উপর রয়েছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। ফলে কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে তা ক্লাসেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তারপরও ক্লাসে পড়া আদায় সন্তোষজনক না হলে তাদের জন্য রয়েছে ডিটেনশন ক্লাস। যেখানে নির্দিষ্ট শিক্ষকের সামনে পড়া মুখস্থ করে দিতে হবে, নয়তো ছুটি মিলবেনা। সকল শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে একই ব্যবস্থা।নানা শিক্ষা উপকরণের সাহায্যে আনন্দময় পরিবেশে ক্লাসের পড়া মুখস্থ করে আদায় করা হয়। ক্লাসে যা বোঝা যায়নি সে বিষয়গুলো পুনরালোচনা করা হয়। লেখাপড়ার মান বজায় রাখতে মাদ্রাসায় উপস্থিতি হার শতভাগ নিশ্চিত করা জরুরী। তাই আমরা প্রতিটি অভিভাবকের ফোন নম্বর সংরক্ষণ করে কোন ছাত্র ছাত্রী অনুপস্থিত থাকলে কারণ জানতে চেয়ে অভিভাবককে ফোন করি। ফলে আমাদের স্কুলে উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিং এবং গাইড বই এর উপর নির্ভরতা দূর করতে বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের উপর মানসম্মত হ্যান্ডনোট প্রদান করা হয়।
বিভাগসমূহ: নূরানী, নাজেরা ও হেফজুল কোরআন।
শ্রেণি: শিশু শ্রেণি হতে দাখিল ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত।
বিষয় : আরবী, বাংলা, অংক ও ইংরেজি মৌলিক বিষয়।
তথ্য প্রযুক্তি: প্রগতিশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ও নিজেকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে কম্পিউটার জ্ঞান এর বিকল্প নেই। যার ফলস্বরূপ কম্পিউটার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,  এ অঞ্চলে অত্র প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। গরীব অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্য সব রকম সুযোগ সুবিধা প্রদান করছেন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি সরকারি তালিকাভুক্ত করার জোর আবেদন জানাচ্ছি।

অভিভাবকরা জানান, গরীব হতদরিদ্রের মাঝে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতি সুনামের সহিত পাঠদান করে আসছে।  পরিক্ষার ফলাফল ও সন্তোষজনক।

এ বিষয়ে আল ফালাহ একাডেমি নূরানীর মাদ্রাসার পরিচালক মাও.নাসরুল্লাহ খান রাসেল জানান, অত্র এলাকায় শিক্ষার হার কম এবং অত্যন্ত অবহেলিত অজপাড়া একটি অঞ্চল। আমাদের নূরাণী মাদ্রাসাটি ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার প্রসারে গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের মাদ্রাসায় বিনা বেতনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ জন। এদের সকলেই ইয়াতিম ও দরিদ্র। যাদের যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক খরচ মাদ্রাসার ফান্ড থেকে দেওয়া হয়।আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উম্নয়ন করার লক্ষে মাদ্রাসাটি স্থানান্তর করার কারনে ব্যয়বহুল খরচ হয় যা আমাদের বাজেটের বাহিরে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও বণ্যার কারণে মাদ্রাসার ভূমি নিচু হওয়ায় পানির নিচে তলিয়ে যায়। যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারনে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়। স্কুলের অবকাঠামোগত পরিবেশ, জায়গা নির্ধারণ ও সরকারি সমস্ত নীতিমালা অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি এ শিক্ষাপীঠ। আগামীর নতুন প্রজন্মের উন্নত ও আধুনিক শিক্ষাদান করার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি তালিকাভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জাানচ্ছি এবং এলাকার শিক্ষানুরাগী, প্রভাবশালীদের কাছে আর্থিক সহযোগীতা কামনা করছি।

You may also like

Uncategorized শিক্ষাঙ্গন

নাজিরপুরে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

পিরোজপুর প্রতিনিধি :বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ
Uncategorized শিক্ষাঙ্গন সারাদেশ

পিরোজপুর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতবিনিময়

পিরোজপুর প্রতিনিধি: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যের পিরোজপুরে আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা, আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে পিরোজপুর