বদলে যাচ্ছে কৃষি, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য
দেশে তাপদাহ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফসলের ও মাঠে যেন আগুন ঝরছে। গাছেই পুড়ে যাচ্ছে ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল। কৃষকরা মাঠে বেশিক্ষণ থাকতে না পারায় জমিতে পানিও দিতে পারছেন না পরিমাণ মতো। যারা একটু বেশি সময় মাঠে থাকছেন গরমে সেসব কৃষকের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তারপরও খরার হাত থেকে জমির ফসল রক্ষায় সেচ দিতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা।
ফসল বাঁচাতে অন্যবারের তুলনায় তিনগুণ বেশি সেচ দিতে হচ্ছে, যার ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষকের ত্রাহি অবস্থা। এ মুহূর্তে তাপমাত্রার তীব্রতা কৃষকদের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন আবহাওয়া দীর্ঘায়িত হলে চলতি মৌসুমের ধানসহ অন্যান্য ফল-ফসলের সামগ্রিক উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে অন্তত ৩০ শতাংশ।
গত বছর দীর্ঘতম খরার কবলে পড়ে তারা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এক বছরের মাথায় আবার খরার কবলে পড়ে তারা মহাসংকটে। গভীর নলক‚পের মাধ্যমে বোরো জমিতে সেচ দেয়ার চেষ্টা চললেও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে অনেক। আর ঘাস, পাট ও তিলের জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা তো সম্ভবই হচ্ছে না। পোলট্রি শিল্প থেকে শুরু করে সবজি সবখানেই তাপপ্রবাহের থাবা। অনেক চাষি বিলে শ্যালো ইঞ্জিন লাগিয়ে পানি নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিলের অধিকাংশ স্থান শুকিয়ে গেছে। ফলে তারা মারাত্মক সেচ সংকটে পড়েছেন।
অনেকে জানান, তারা পাট বুনতে পারছেন না। ধান, পাট, ভুট্টা সবখানেই সংকট। ফল, ফসল, পোলট্রি, যোগাযোগে যেমন ভয়াবহ অবস্থা একইসঙ্গে বন্ধ হয়েছে স্কুল-কলেজ। আবার অনলাইনে শিক্ষা চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তাতে শিক্ষা কতটুকু শিক্ষার্থীরা পাবে সেটা ভাবনার ব্যাপার। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত রোগীতে ভরা। ব্যবসা-বাণিজ্য সবখানে ভাটা। মানুষ ঘর থেকে তো বের হতে পারছে না। এই তাপদাহ সহজে যাবে বলেও মনে হচ্ছে না। ফসলের মৌসুম চলছে। অন্যদিকে তীব্র গরমের জন্য কৃষক জমিতে থাকতেই পারছেন না। মাঠে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্থির হয়ে কাজ ফেলে চলে যেতে হচ্ছে। জমিতে ২-৩ বার সেচ দেয়ার পর জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও ফসল বেচার সময় নানা কথা ওঠে। এ ক্ষতি কীভাবে পোষাবেন তা নিয়ে ভাবনায় কৃষকরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় এবং হঠাৎ তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গভীর পাম্প বসিয়ে খাবার পানি তুলতে হচ্ছে। অনেক স্থানে তাতেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনাবৃষ্টির ফলে খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর শুকিয়ে গেছে। এতে কৃষির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতায় প্রভাব ফেলেছে চলমান অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ। ঝুঁকি বাড়ছে গর্ভবতী মা ও অনাগত সন্তানের। এর মধ্যেই প্রসবপূর্ব সেবা বা অ্যান্টিনেটাল কেয়ার (এএনসি) গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী নারীরা। গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানভেদে এএনসি গ্রহণের হার কমেছে ১০-২০ শতাংশ। কোথাও কোথাও তা ২৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে।
তাপ প্রবাহের এ সময়ে ঘর থেকে বের না হওয়া ভালো। কিন্তু ফসলের মাঠ পরিচর্যার মৌসুম এটাই ফলে কৃষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী সবাই ঝুঁকিতে। আমরা মনে করি এ সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাপপ্রবাহ কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যাতে আগামীতে এই সংকট আরো প্রকট হয়ে দেখা না দেয়।