ছাতকে ইউএনও ২০০ কার্যদিবসে দায়ের করেছেন ২৪০টি মামলা

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতকে জমি ও নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন ও বালুখেকোদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বালুখেকোরা যত বড় প্রভাবশালী হোক নৌপথে লুটপাটকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুসিয়ারি দেন ইউএনও মোঃ তরিকুল ইসলাম। উপজেলার প্রশাসন, মাদক, অপরাধী, নৌপথে বালু লুটপাটকারীদের জন্য আতঙ্কে হিসেবে পরিণত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম। তার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২০০ কার্যদিবসেই তিনি দায়ের করেছেন ২৪০টি মামলা। যা উপজেলার অতীতের ১৬ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মাদক, ইজারা বহির্ভূত বালু উত্তোলন, পরিবেশ আইন, ভোক্তা অধিকার ও সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই পরিচালিত হচ্ছে মোবাইল কোট অভিযান।
ইউএনও’র দুঃসাহসী নেতৃত্বে গত কয়েক মাসেই দায়ের হয়েছে ৭২টি মাদক মামলা। আদালতের মাধ্যমে সাজা ভোগ করেছে শতাধিক অপরাধী। এতে মাদক সিন্ডিকেট বালু পাথর লুটপাটকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইজারা বহির্ভূত নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে চলছে নিয়মিত অভিযান। এ পর্যন্ত দায়ের হয়েছে ১৫টি মামলা। জব্দ করেছে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ড্রেজার, বাল্কহেড, স্টিল নৌকা ও ৫০ হাজার ঘনফুট বালু। অপরাধ দমনের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ে এনেছেন নতুন গতি। তার দক্ষতায় ইতোমধ্যে ছাতক পৌরসভায় রাজস্ব আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। হাট বাজার মনিটরিং ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা তিনি কঠোর। মাদক ও বালু-পাথর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকায় তিনি অপরাধীদের জন্য আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি এখন প্রশংসিত ও আস্থার প্রতীক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর ছাতক বিট কর্মকর্তা মো. আইউব খাঁন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১১ (জি.আর ২৬০/২৫ দায়রা) একদিনের ব্যবধানে বালু খেকোদের জামিন মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। বালুখেকোদের আদালত জামিন দেয়ার এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “আইনের কঠোরতা কোথায়?” একজন প্রভাবশালী যুবদল নেতাসহ অভিযুক্তদের এতো দ্রুত জামিন পাওয়া এবং প্রশাসনের অভিযান সত্ত্বেও বিচার প্রক্রিয়ার এ ধরনের পরিণতি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
জামিনপ্রাপ্ত আসামি হলেন, ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুচবাড়ী গ্রামের মৃত মশরফ আলীর ছেলে বদরুল ইসলাম (৫০), ছাতক উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ইসলামপুর গ্রামের মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে বাবুল মিয়া (৬০), ছাতক পৌরসভার তাতীকোনা গ্রামের রজাক মিয়ার ছেলে ও পৌর যুবদলের ১ম যুগ্ম আহবায়ক মো. তারেক মিয়া (৪২), সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার চাটিবহর গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মো. সাহাব উদ্দিন (৫০) এবং তার ছেলে মো. যোবায়ের (২৫)।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর ছাতক উপজেলার হাদাঁ পান্ডব এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বন বিভাগ ও ভূমি অফিসের সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযানে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়। অভিযুক্তরা প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেলেও ছাতক বিট কর্মকর্তা মো. আইউব খাঁন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বালু উত্তোলনের মাধ্যমে পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতিকে মারাত্মক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, উপজেলা ভূমি অফিস, ফরেষ্ট বিভাগের একাধিকবার অভিযান চালালেও বালুখেকোরা তা উপেক্ষা করে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর স্রোত পরিবর্তিত হবে, বন্যার ঝুঁকি বাড়বে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একাধিক মোবাইল কোট অভিযান করছে। পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রশাসনের কঠোর তৎপরতা এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা মিলিত হলে এ সংকট নিরসন সম্ভব।
ছাতকে বালুখেকো ও প্রশাসনের এখন মুখামুখি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়। পরিবেশ ও জনজীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, যতো বাধাই আসুক আমি সরকারি সম্পদ রক্ষা করব। ইজারা বহির্ভূত নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করতে দেব না। মাদকসহ সব অপরাধের বিরুদ্ধেই ছাতক উপজেলা প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।